কালিয়াকৈরে শ্রমিক অসন্তোষ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৭ 

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ২৩

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি কারখানার শ্রমিকেরা সরকার ঘোষিত বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার মৌচাক এলাকায় শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী একটি কারখানায় এই বিক্ষোভ হয়। এ কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তাতে শ্রমিকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে অন্তত সাতজন আহত হয়।

পুলিশ ও শ্রমিকেরা জানান, ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক মাস আগে পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করলে সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়। পোশাক কারখানাগুলো সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে। কিন্তু অন্যান্য কারখানার পোশাক শ্রমিকেরা বাড়তি বেতন পায় না। এ কারণে সরকার ঘোষিত বেতনবঞ্চিত কারখানার শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরেই গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বিভিন্ন কারখানায় আন্দোলন করছে। কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস নামের শিশুখাদ্য তৈরির কারখানার শ্রমিকেরা সরকার ঘোষিত বেতন বাস্তবায়নে আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলনকারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করলেও হঠাৎ শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে মহাসড়কে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্পপুলিশ, কালিয়াকৈর থানা-পুলিশ ও নাওজোর হাইওয়ে থানা-পুলিশ সদস্যরা গিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ সময় শ্রমিকেরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শ্রমিক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক আরাফাত বলেন, ‘আশপাশের সব কারখানায় শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও আমাদের কারখানায় তা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কারখানার শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৬ হাজার ৭০০ টাকা। তাই আমরাও সরকার ঘোষিত বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছি।’

কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকদের বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনা করে বেতনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন ৬ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। গত শনিবার কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল। বেতনের বিষয়টি সমাধান হওয়ার পর গতকাল রোববার থেকে শ্রমিকেরা কাজও করছে। কিন্তু আজ সকালে বহিরাগত কিছু শ্রমিকের উসকানিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে আমাদের কোনো শ্রমিক ছিল না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পপুলিশ গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের প্রথমে বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকেরা মহাসড়কে যানজট সৃষ্টিসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়েছে। পরে লাঠিপেটা, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত