Ajker Patrika

সাবেক এসএসএফ ডিজি ও স্ত্রীর নামে ১২ প্লট ও জমি

  • বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা বলছে দুদক।
  • ১৫ ব্যাংক হিসাবে কয়েক কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলেছে, হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ চালিয়ে আলোচনায় আসা সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হলেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মুজিবুর রহমান।

দুদক বলছে, মো. মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১২টি প্লট ও জমির থাকার তথ্য পেয়েছে তারা। এসব সম্পদ ক্রোক করতে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

দুদক সূত্র বলেছে, মুজিবুর ও তাঁর স্ত্রীর নামে রাজধানীর মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি করে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। মিরপুরের ফ্ল্যাটটির আকার ৪ হাজার ৫০ বর্গফুট। তাঁদের নামে পূর্বাচলে একটি বাড়ি ও সাভারে একটি টিনশেড বাড়ি আছে। এ ছাড়া রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত, মিরপুর ও পূর্বাচল এলাকায় ১২টি প্লট ও জমি রয়েছে।

দুদক সূত্রটি বলেছে, সাবেক এসএসএফ মহাপরিচালক ও তাঁর স্ত্রীর নামে ১৪টি আইটেমে বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে তাঁদের নামে থাকা ১৫টি ব্যাংক হিসাবে কয়েক কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুজিবুর রহমান দম্পতির নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং রাজধানী ঢাকার ২টি ফ্ল্যাট, সাভারের বাড়ি ও ১২টি প্লট ক্রোক করতেও আদালতে আবেদন করেছে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক সিরাজুল হক গত সোমবার আদালতে অবরুদ্ধের আবেদন করেন।

দুদকের অভিযোগ, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে মুজিবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও স্ত্রীর নামে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মুজিবুরের অর্জিত সম্পদের মধ্যে ৭টি প্লটের মালিক তাঁর স্ত্রী তাসরিন মুজিব। তাঁর নামে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাউনিয়া মৌজা এলাকায় এসব প্লট রয়েছে। এর মধ্যে একটি সাত কাঠা প্লটের মৌজা মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাসরিনের নামে ক্যান্টনমেন্টের জোয়ারসাহারা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। মিরপুরের ৪ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি মুজিবুর রহমানের নামে। এর বাজারমূল্য তিনি দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তার সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে গত এক সপ্তাহে এসব তথ্য পেয়েছে দুদক। তবে তাদের নামে আরও অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। সেসব সম্পদের তথ্য শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

এসএসএফের সাবেক ডিজি মো. মুজিবুর রহমান সেনা সদর দপ্তরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। সর্বশেষ আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি পদ থেকে তাঁকে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি ছাড়া কোনো সরকারি বা সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার পক্ষে চাকরি করে এত বিপুল সম্পদ অর্জন করা সম্ভব না। হয়তো অনেক যুক্তি আসতে পারে সম্পদ অর্জনের পক্ষে। কিন্তু তিনি যদি শান্তি মিশনের শীর্ষ পদেও থাকেন তবু এত সম্পদ অর্জন করা সম্ভব না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া যাঁদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে এরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত