আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে গত বছর ২৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের কারণে ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাফিলতিতে ঝুলে আছে এই তদন্ত।
তদন্ত শেষ না হওয়ায় এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না।
গত বছর ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারের কুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। আটক করা হয় ওই ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের বেসমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মোতালেব মিন্টুকে।
ঘটনার পর ৮ মার্চ তাদেরকে আটক করার পর ৯ মার্চ দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদিকে ৯ মার্চ বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ১৪ মার্চ আটক তিন জনকে দায়িত্বে অবহেলা জনিত প্রাণহানির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার তিনজন জামিন পেয়ে যান।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, আসামি মোতালেব মিন্টুকে গত বছরের ২৮ মার্চ, পরে ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. তৌহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়নি।’
মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, এই মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক এস এম রায়সুল ইসলাম। মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানোর পর বিভিন্ন সময়ে তারা জামিন পান।’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই মামলার তদন্তের সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিআইডি সম্পৃক্ত। কোনো সংস্থাই এই ভবনে কেন বিস্ফোরণ হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাননি। তবে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনটি এক সময় টিনশেড ভবন ছিল। তখন একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সে সময় জায়গার মালিক যিনি এখন মৃত ( বর্তমান মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানের বাবা) ওই রেস্টুরেন্টের জন্য একটি বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গ্যাস লাইন নিয়েছিলেন। পরে টিনশেড ভবনটি ভেঙে পাঁচ তলা ভবন করা হয়। ওই ভবনের নিচ তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট ছিল। তখনো সেখানে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন ছিল। একপর্যায়ে রেস্টুরেন্টটি তুলে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। তখন বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন সারেন্ডার করে সেখানে আবাসিক (ডোমেস্টিক) গ্যাস লাইন সংযোগের অনুমতি নেওয়া হয়। তৎকালীন বাড়ির মালিক তিতাস গ্যাসকে আবাসিক লাইনের সংযোগ দেওয়ার কথা বললে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে গ্যাসের লাইন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তিতাস গ্যাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাসের পাইপলাইন আগেরটা ঠিক রেখে আবাসিক লাইনের গ্যাস সংযোগ চালু করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ডমেস্টিক লাইনের গ্যাস পাইপ ও কমার্শিয়াল লাইনের গ্যাস পাইপ এক হতে পারে না। দুই লাইনের গ্যাস চলাচল ভিন্ন গতি। মূলত গ্যাস লাইনের পাইপ পরিবর্তন না করায় দীর্ঘদিন পর এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস ও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তিতাস গ্যাসকে চিঠি দিয়ে ওই সময়কার (সম্ভবত ২০০২ সালে) যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল গ্যাস লাইনের পরিবর্তে ডোমেস্টিক লাইনের সংযোগ দিয়েছিল সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস ওই নাম দিতে পারেনি। ওই সংক্রান্ত নথি তিতাস গ্যাস খুঁজে পাচ্ছে না বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আদালতকে জানালে, আদালত তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সেটা জানাতে পারেনি।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিতাস গ্যাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তথ্য ও ওই সময়ে তিতাস গ্যাসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের তথ্য জানানোর পর গ্যাস বিস্ফোরণের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে।
ওইদিনের ঘটনা
গত বছর ৭ মার্চ। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় নর্থসাউথ রোডে চলাচলকারী গাড়ি ও মানুষ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের মধ্যে এমন কি রাস্তায় চলাচলকারী অনেকের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। ঘটনাস্থলে ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত অনেককে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়।
বিস্ফোরণে ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে স্যানিটারি ও গৃহস্থালি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। বিস্ফোরণে ভবনটির দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি ভবনও।
মামলায় যা বলা হয়
মামলায় বলা হয়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম মেনে (বিল্ডিং কোড) নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড/ বেসমেন্ট তৈরির অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে নির্মিত এই বেসমেন্টে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। সেখানে নির্মাণ সামগ্রী মজুত ও বিক্রয় কাজে ব্যবহার করা হতো। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কুইন্স ক্যাফে নামে রান্নাঘর করা হয়েছিল। অথচ গ্যাস লিকেজ সমস্যা ও পয়োবর্জ্যে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীগণ অর্থের লোভে অবৈধভাবে বেসমেন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবহার করে আসছিলেন। এইরূপ অপরাধজনক কাজের জন্য এতগুলো প্রাণহানি ও মালামাল ধ্বংস হয়েছে।
যারা নিহত হন
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ২১ বছর বয়সী মো. সুমন, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বরিশালের কাজির হাট থানার ইসহাক মৃধা (৩৫), যাত্রাবাড়ীর ৪০ বছর বয়সী মুনসুর হোসেন, আলু বাজার এলাকার ৪২ বছর বয়সী মো. ইসমাইল, বিবিএ ছাত্র চাঁদপুরের মতলবের আল আমিন (২৩), কেরানীগঞ্জের মাস্টার বাড়ি এলাকার রাহাত হোসেন (১৮), ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম (৩৮), চক বাজারের নদী বেগম (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদরের মাঈন উদ্দিন (৫০), রাজধানীর বংশালের নাজমুল হোসেন (২৫), মানিকগঞ্জ সদরের ৫৫ বছর বয়সী ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৩৪ বছর বয়সী আবু জাফর সিদ্দিক, বংশালের ৭০ বছর বয়সী আকুতি বেগম, যাত্রাবাড়ীর ৬০ বছর বয়সী ইদ্রিস মীর, একই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিদ্দিক বাজারের মো. হৃদয় (২০) ও ওয়াসেক মো. সিয়াম (২০) ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঘটনা স্থল থেকে আরও দুজনের মৃতদেহ একদিন পর উদ্ধার করা হয়। দুদিন পর আরেকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও ছয় জন মৃত্যুবরণ করেন এই ঘটনায়। এছাড়াও অনেকে আহত হন।
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে গত বছর ২৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের কারণে ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাফিলতিতে ঝুলে আছে এই তদন্ত।
তদন্ত শেষ না হওয়ায় এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না।
গত বছর ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারের কুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। আটক করা হয় ওই ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের বেসমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মোতালেব মিন্টুকে।
ঘটনার পর ৮ মার্চ তাদেরকে আটক করার পর ৯ মার্চ দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদিকে ৯ মার্চ বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ১৪ মার্চ আটক তিন জনকে দায়িত্বে অবহেলা জনিত প্রাণহানির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার তিনজন জামিন পেয়ে যান।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, আসামি মোতালেব মিন্টুকে গত বছরের ২৮ মার্চ, পরে ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. তৌহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়নি।’
মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, এই মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক এস এম রায়সুল ইসলাম। মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানোর পর বিভিন্ন সময়ে তারা জামিন পান।’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই মামলার তদন্তের সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিআইডি সম্পৃক্ত। কোনো সংস্থাই এই ভবনে কেন বিস্ফোরণ হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাননি। তবে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনটি এক সময় টিনশেড ভবন ছিল। তখন একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সে সময় জায়গার মালিক যিনি এখন মৃত ( বর্তমান মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানের বাবা) ওই রেস্টুরেন্টের জন্য একটি বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গ্যাস লাইন নিয়েছিলেন। পরে টিনশেড ভবনটি ভেঙে পাঁচ তলা ভবন করা হয়। ওই ভবনের নিচ তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট ছিল। তখনো সেখানে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন ছিল। একপর্যায়ে রেস্টুরেন্টটি তুলে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। তখন বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন সারেন্ডার করে সেখানে আবাসিক (ডোমেস্টিক) গ্যাস লাইন সংযোগের অনুমতি নেওয়া হয়। তৎকালীন বাড়ির মালিক তিতাস গ্যাসকে আবাসিক লাইনের সংযোগ দেওয়ার কথা বললে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে গ্যাসের লাইন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তিতাস গ্যাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাসের পাইপলাইন আগেরটা ঠিক রেখে আবাসিক লাইনের গ্যাস সংযোগ চালু করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ডমেস্টিক লাইনের গ্যাস পাইপ ও কমার্শিয়াল লাইনের গ্যাস পাইপ এক হতে পারে না। দুই লাইনের গ্যাস চলাচল ভিন্ন গতি। মূলত গ্যাস লাইনের পাইপ পরিবর্তন না করায় দীর্ঘদিন পর এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস ও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তিতাস গ্যাসকে চিঠি দিয়ে ওই সময়কার (সম্ভবত ২০০২ সালে) যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল গ্যাস লাইনের পরিবর্তে ডোমেস্টিক লাইনের সংযোগ দিয়েছিল সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস ওই নাম দিতে পারেনি। ওই সংক্রান্ত নথি তিতাস গ্যাস খুঁজে পাচ্ছে না বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আদালতকে জানালে, আদালত তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সেটা জানাতে পারেনি।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিতাস গ্যাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তথ্য ও ওই সময়ে তিতাস গ্যাসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের তথ্য জানানোর পর গ্যাস বিস্ফোরণের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে।
ওইদিনের ঘটনা
গত বছর ৭ মার্চ। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় নর্থসাউথ রোডে চলাচলকারী গাড়ি ও মানুষ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের মধ্যে এমন কি রাস্তায় চলাচলকারী অনেকের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। ঘটনাস্থলে ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত অনেককে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়।
বিস্ফোরণে ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে স্যানিটারি ও গৃহস্থালি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। বিস্ফোরণে ভবনটির দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি ভবনও।
মামলায় যা বলা হয়
মামলায় বলা হয়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম মেনে (বিল্ডিং কোড) নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড/ বেসমেন্ট তৈরির অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে নির্মিত এই বেসমেন্টে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। সেখানে নির্মাণ সামগ্রী মজুত ও বিক্রয় কাজে ব্যবহার করা হতো। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কুইন্স ক্যাফে নামে রান্নাঘর করা হয়েছিল। অথচ গ্যাস লিকেজ সমস্যা ও পয়োবর্জ্যে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীগণ অর্থের লোভে অবৈধভাবে বেসমেন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবহার করে আসছিলেন। এইরূপ অপরাধজনক কাজের জন্য এতগুলো প্রাণহানি ও মালামাল ধ্বংস হয়েছে।
যারা নিহত হন
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ২১ বছর বয়সী মো. সুমন, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বরিশালের কাজির হাট থানার ইসহাক মৃধা (৩৫), যাত্রাবাড়ীর ৪০ বছর বয়সী মুনসুর হোসেন, আলু বাজার এলাকার ৪২ বছর বয়সী মো. ইসমাইল, বিবিএ ছাত্র চাঁদপুরের মতলবের আল আমিন (২৩), কেরানীগঞ্জের মাস্টার বাড়ি এলাকার রাহাত হোসেন (১৮), ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম (৩৮), চক বাজারের নদী বেগম (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদরের মাঈন উদ্দিন (৫০), রাজধানীর বংশালের নাজমুল হোসেন (২৫), মানিকগঞ্জ সদরের ৫৫ বছর বয়সী ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৩৪ বছর বয়সী আবু জাফর সিদ্দিক, বংশালের ৭০ বছর বয়সী আকুতি বেগম, যাত্রাবাড়ীর ৬০ বছর বয়সী ইদ্রিস মীর, একই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিদ্দিক বাজারের মো. হৃদয় (২০) ও ওয়াসেক মো. সিয়াম (২০) ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঘটনা স্থল থেকে আরও দুজনের মৃতদেহ একদিন পর উদ্ধার করা হয়। দুদিন পর আরেকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও ছয় জন মৃত্যুবরণ করেন এই ঘটনায়। এছাড়াও অনেকে আহত হন।
রাজধানীর জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় বেলা পৌনে ১২টা থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে চালকেরা অবরোধ তুলে নিলে ৩ ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
১০ মিনিট আগেপ্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, সংস্কৃতির নতুন রূপ হচ্ছে সিনেমা, যা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে। সিনেমার মাধ্যমে একটি জাতিকে উজ্জীবিত করা যায়। তাই ভালো সিনেমা বিনির্মাণের বিকল্প নেই।
২১ মিনিট আগেচট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে কক্সবাজারগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শাহ আমানত সেতুর টোলবক্সের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে পড়ে। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে।
৪১ মিনিট আগেআহত শিক্ষার্থী সোহেলুল হক বলেন, “আমরা গিয়ে বলেছিলাম স্যার আমাদের জীবনটা বাঁচান স্যার। তিন বছরেও আপনি কিছু করতে পারেননি। আমরা এনওসি এনেছি। আপনি সাইন করে দেন। এনওসিতে লেখা ছিল, ‘আমরা যেহেতু ওদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। অন্য কোথাও পড়াশোনা করলে আমাদের আপত্তি নেই।’ এই এনওসিতে তিনি...
১ ঘণ্টা আগে