Ajker Patrika

সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ২৬ মৃত্যু: মামলা আটকে আছে তদন্তে 

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ২৬ মৃত্যু: মামলা আটকে আছে তদন্তে 

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে গত বছর ২৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের কারণে ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাফিলতিতে ঝুলে আছে এই তদন্ত।

তদন্ত শেষ না হওয়ায় এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না।
গত বছর ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারের কুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। আটক করা হয় ওই ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের বেসমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মোতালেব মিন্টুকে।

ঘটনার পর ৮ মার্চ তাদেরকে আটক করার পর ৯ মার্চ দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদিকে ৯ মার্চ বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ১৪ মার্চ আটক তিন জনকে দায়িত্বে অবহেলা জনিত প্রাণহানির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার তিনজন জামিন পেয়ে যান।

মামলার নথি থেকে দেখা যায়, আসামি মোতালেব মিন্টুকে গত বছরের ২৮ মার্চ, পরে ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। 

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. তৌহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়নি।’

মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, এই মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক এস এম রায়সুল ইসলাম। মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানোর পর বিভিন্ন সময়ে তারা জামিন পান।’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই মামলার তদন্তের সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিআইডি সম্পৃক্ত। কোনো সংস্থাই এই ভবনে কেন বিস্ফোরণ হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাননি। তবে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনটি এক সময় টিনশেড ভবন ছিল। তখন একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সে সময় জায়গার মালিক যিনি এখন মৃত ( বর্তমান মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানের বাবা) ওই রেস্টুরেন্টের জন্য একটি  বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গ্যাস লাইন নিয়েছিলেন। পরে টিনশেড ভবনটি ভেঙে পাঁচ তলা ভবন করা হয়। ওই ভবনের নিচ তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট ছিল। তখনো সেখানে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন ছিল। একপর্যায়ে রেস্টুরেন্টটি তুলে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। তখন বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন সারেন্ডার করে সেখানে আবাসিক (ডোমেস্টিক) গ্যাস লাইন সংযোগের অনুমতি নেওয়া হয়। তৎকালীন বাড়ির মালিক তিতাস গ্যাসকে আবাসিক লাইনের সংযোগ দেওয়ার কথা বললে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে গ্যাসের লাইন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তিতাস গ্যাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাসের পাইপলাইন আগেরটা ঠিক রেখে আবাসিক লাইনের গ্যাস সংযোগ চালু করে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ডমেস্টিক লাইনের গ্যাস পাইপ ও কমার্শিয়াল লাইনের গ্যাস পাইপ এক হতে পারে না। দুই লাইনের গ্যাস চলাচল ভিন্ন গতি। মূলত গ্যাস লাইনের পাইপ পরিবর্তন না করায় দীর্ঘদিন পর এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস ও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তিতাস গ্যাসকে চিঠি দিয়ে ওই সময়কার (সম্ভবত ২০০২ সালে) যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল গ্যাস লাইনের পরিবর্তে ডোমেস্টিক লাইনের সংযোগ দিয়েছিল সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস ওই নাম দিতে পারেনি। ওই সংক্রান্ত নথি তিতাস গ্যাস খুঁজে পাচ্ছে না বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। 

তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আদালতকে জানালে, আদালত তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সেটা জানাতে পারেনি।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিতাস গ্যাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তথ্য ও ওই সময়ে তিতাস গ্যাসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের তথ্য জানানোর পর গ্যাস বিস্ফোরণের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে।

ওইদিনের ঘটনা
গত বছর ৭ মার্চ। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় নর্থসাউথ রোডে চলাচলকারী গাড়ি ও মানুষ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের মধ্যে এমন কি রাস্তায় চলাচলকারী অনেকের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। ঘটনাস্থলে ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত অনেককে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়।

বিস্ফোরণে ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে স্যানিটারি ও গৃহস্থালি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। বিস্ফোরণে ভবনটির দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি ভবনও।

মামলায় যা বলা হয়
মামলায় বলা হয়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম মেনে (বিল্ডিং কোড) নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড/ বেসমেন্ট তৈরির অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে নির্মিত এই বেসমেন্টে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। সেখানে নির্মাণ সামগ্রী মজুত ও বিক্রয় কাজে ব্যবহার করা হতো। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কুইন্স ক্যাফে নামে রান্নাঘর করা হয়েছিল। অথচ গ্যাস লিকেজ সমস্যা ও পয়োবর্জ্যে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীগণ অর্থের লোভে অবৈধভাবে বেসমেন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবহার করে আসছিলেন। এইরূপ অপরাধজনক কাজের জন্য এতগুলো প্রাণহানি ও মালামাল ধ্বংস হয়েছে।

যারা নিহত হন
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ২১ বছর বয়সী মো. সুমন, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বরিশালের কাজির হাট থানার ইসহাক মৃধা (৩৫), যাত্রাবাড়ীর ৪০ বছর বয়সী মুনসুর হোসেন, আলু বাজার এলাকার ৪২ বছর বয়সী মো. ইসমাইল, বিবিএ ছাত্র চাঁদপুরের মতলবের আল আমিন (২৩), কেরানীগঞ্জের মাস্টার বাড়ি এলাকার রাহাত হোসেন (১৮), ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম (৩৮), চক বাজারের নদী বেগম (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদরের মাঈন উদ্দিন (৫০), রাজধানীর বংশালের নাজমুল হোসেন (২৫), মানিকগঞ্জ সদরের ৫৫ বছর বয়সী ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৩৪ বছর বয়সী আবু জাফর সিদ্দিক, বংশালের ৭০ বছর বয়সী আকুতি বেগম, যাত্রাবাড়ীর ৬০ বছর বয়সী ইদ্রিস মীর, একই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিদ্দিক বাজারের মো. হৃদয় (২০) ও ওয়াসেক মো. সিয়াম (২০) ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ঘটনা স্থল থেকে আরও দুজনের মৃতদেহ একদিন পর উদ্ধার করা হয়। দুদিন পর আরেকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও ছয় জন মৃত্যুবরণ করেন এই ঘটনায়। এছাড়াও অনেকে আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতার ঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ, শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ তিন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আগুনে আয়েশা বেগম (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই শিশুসন্তান।

বেলাল হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ দুই শিশু বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ শিশুদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় নিজের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন বেলাল হোসেন। গভীর রাতে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত শিশু আয়েশা দগ্ধ হয়ে মারা যায়। দগ্ধ হন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তিনজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার দাস বলেন, এক শিশুকে মৃত এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অরূপ পাল বলেন, বেলাল হোসেনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুই শিশুর শরীর ৭০ থেকে ৮০ শাতংশ পুড়ে গেছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক শিশু মারা গেছে। আরও তিনজন অগ্নিদগ্ধ। তবে আগুনের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এটি পরিকল্পিতভাবে নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সড়কে ঝরল খালা-ভাগনের প্রাণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের স্কুলপাড়ায় ঈশ্বরদী-লালপুর-বাঘা-বানেশ্বর আঞ্চলিক মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাকিব হোসেন (২২) এবং শহরের পিয়ারাখালী এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫)। নিহত ব্যক্তিরা সম্পর্কে খালা ও ভাগনে ছিলেন। তাঁরা দুজনই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল বিকেলে লালপুর থেকে যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা ঈশ্বরদী শহরে আসছিল। অটোরিকশাটি শহরের স্কুলপাড়ার মহাসড়কে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশার দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে অটোরিকশার চালক পালিয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে এনসিপির মশাল মিছিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে শরীয়তপুর জেলা শহরে মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

এনসিপির শরীয়তপুর জেলার সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘হাদি হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভিন্নমত দমন ও রাজনৈতিক কণ্ঠরোধের ধারাবাহিকতারই অংশ এই হত্যাকাণ্ড। দিনদুপুরে খুনিরা গুলি করে কীভাবে পালিয়ে গেল? এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘এটি শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যার বিচার না হলে তরুণ সমাজ রাজপথে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

বিক্ষোভে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত