নদীদূষণ নিয়ে বিসিকের উপস্থাপন করা তথ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে: নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২২, ২৩: ৫২

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ট্যানারিসহ বিভিন্ন কারখানা সাভারের নদ-নদী ও পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে এই এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’ আজ সোমবার সাভারের চামড়া শিল্পনগরসহ ধলেশ্বরী নদী, খাল-বিল ও জলাধার দূষণের বাস্তব অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে মনজুর আহমেদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

সোমবার সকালে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্পনগরে যান। এ সময় তিনি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক), পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি চামড়া শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারসহ (সিইটিপি) একটি কারখানা পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে মনজুর আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমি হতাশ। বিসিকের পক্ষ থেকে সিইটিপি ও নদীদূষণ নিয়ে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তার সত্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এই শিল্পনগরে যে পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা যায় তার চেয়ে বেশি চামড়ার আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখান থেকে যে অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয় না তা আমাদের নিশ্চিত করতে পারেনি তাঁরা। এ বিষয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন।’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদী রক্ষা কমিশন কারখানা বন্ধ করার পক্ষে না। তার মানে এই নয় যে ঢাকা শিল্প এলাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিআইডব্লিউটিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করা যাবে না। যদি তাঁরা না পারে তাহলে নতুন ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারিশ করা হবে। যাতে চামড়া শিল্পটাকে আরও আধুনিক করা যায়।

মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হলে চামড়া শিল্প কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। কিন্তু সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। চামড়া শিল্পনগরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি বিসিক। ১৪০টি কারখানা আছে। কিন্তু কোনো ল্যাব নেই।

চামড়া শিল্পনগর পরিদর্শন শেষে উপজেলা পরিষদে যাওয়ার সময় মনজুর আহমেদ চৌধুরী পাশের পদ্মার মোড় এলাকায় ব্যাবিলন গ্রুপের একটি কারখানায় যান। কারখানা কর্তৃপক্ষ মাটি ফেলে স্থানীয় ঋষিপাড়া খাল ভরাট করছিল। এ সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলামকে ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তিনি উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় যোগ দেন।

নদী রক্ষা কমিটির সভায় সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গনি বলেন, সাভার নামাবাজার ও নয়ারহাটে বংশী নদীর তীরে কয়েকশ অবৈধ দখলদার থাকলেও তালিকা করা হয়েছে মাত্র ৬৬ জনের। ওই তালিকায় আব্দুল গনি নামের একজন থাকলেও ওই গনি তিনি নন বলে দাবি করেন মেয়র।

সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, বংশী নদী ও নদীতীরের সব অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দখলদারদের তালিকা তৈরির জন্য একটি কমিটি করার দাবি জানান তিনি।

সভায় সাভারের ইউএনও মাজহারুল ইসলাম দখলদারদের সঠিক তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সভায় নদী জাতীয় রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, দখলদারদের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। নদ-নদী ও খালসহ জলাধার দূষণমুক্ত রাখতে হবে। তবেই মানুষ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত