ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শনিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ বুধবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন। তবে, গত চার দিনের তুলনায় কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কিছুটা কম। সেই সঙ্গে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, সার্ভার ডাউন, কম্পিউটার ধীরগতির হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে যাত্রীদের টিকিট দিতে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। 

বুধবার সকাল ৮টা থেকে স্টেশনের কাউন্টারে এবং অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। 

কিন্তু টিকিট কাউন্টারে ভোগান্তি আছে আগের মতোই। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট প্রত্যাশীরা। আগামী ১ মের অগ্রিম টিকিট আজ কাটতে পারছেন যাত্রীরা। 

কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, আজ যাঁরা অগ্রিম টিকিট কাটছেন, তাঁরা আগামী ১ মে ট্রেনেযাত্রা করবেন। তবে ১ মের টিকিটের চাহিদা কিছুটা কম হওয়ায় গত চার দিনের তুলনায় কিছুটা কম ভিড় হয়েছে স্টেশনে। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও একজন যাত্রীর কাউন্টারে টিকিট পেতে ৩-৪ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আর যখন সার্ভার স্লো হয়ে যাচ্ছে, তখন কিছু সময় টিকিট বিক্রি বন্ধও থাকছে। তখন লাইনে থাকা যাত্রীরা হইচই করছেন। তবে আজও অনলাইনে টিকিট কাটতে সকালে ওয়েবসাইটে ঢুকতে না পারার অভিযোগ করেছেন একাধিক যাত্রী। তবে দু-একজনকে অনলাইনে টিকিট পেতে দেখাও গেছে স্টেশনে। 

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন ইসমাইল আলী। দুই দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে আছেন দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকিট কাটার জন্য। ঈদে পরিবার নিয়ে দিনাজপুরে যাবেন। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আমার পর্যন্ত লাইনে আসার আগেই ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যায়। ফলে কাল টিকিট না পেয়ে আবারও লাইনে দাঁড়ানোর জন্য কমলাপুরে থাকি। আজকে পাঁচজনের পর কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়েছি। তবে টিকিট দিতে অনেক দেরি করছে কাউন্টার থেকে। টিকিট দিতে যত দেরি হচ্ছে, আমাদের ভোগান্তি তত বাড়ছে। তবে অনেক কষ্ট  করে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে ভালো লাগছে।’

স্টেশনের কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো বেশির ভাগ যাত্রী মোবাইল হাতে অনলাইনেও টিকিট কাটার জন্য চেষ্টা করে তাঁরা সফল হতে পারেননি। তাদের একজন মোহাম্মদ সাইফুল রাজধানীর শনির আখড়া থেকে এসেছেন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে। তিনি অনলাইনে টিকিট কাটতে পেরেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য ওয়েবসাইটে চেষ্টা করি। প্রথমবারই ওয়েবসাইটে ঢুকে যায় এবং রংপুর এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট কাটতে পেরেছি। এর আগের চার দিন ধরে চেষ্টা করেও অনলাইনে ঢুকতে পারিনি।’ 

এদিকে সামুমা বিনতে নামের একজন নারী যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট কাটতে ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল ভোগান্তি। কাউন্টারে টিকিট দিতে যেমন দেরি হচ্ছে, অনলাইনে তো ঢুকতেই পারি না, টিকিট কীভাবে কাটব? রেলওয়ে নিম্নমানের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে, যারা টিকিট ব্যবস্থাপনায় করতে পারে না। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট না থাকতেই পারে, কিন্তু একজন যাত্রী ওয়েবসাইটে তো ঢুকতে পারবে। কিন্তু কোনো যাত্রী সকাল ৮টায় ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারে না, এটা কেমন ধরনের ওয়েবসাইট!’ 

 ট্রেনের টিকিট কাটতে এত ভোগান্তির পরও ট্রেনে যেতে চাওয়ার আগ্রহ কেন—এমন প্রশ্নে একাধিক যাত্রী বলেন, ‘উত্তর অঞ্চলে মহাসড়কের কাজ চলছে। ফলে সড়কপথে যেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে আরামদায়ক হিসেবেই যাত্রীরা ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য চেষ্টা করছে।’

মো. জহুরুল ইসলাম নামের এমনই একজন এক যাত্রী বলেন, ‘যদি আজ ট্রেনের টিকিট না পাই তাহলে এবার বাড়ি যাব না। কারণ সড়কপথে রংপুর যেতে অনেক ভোগান্তি হবে।' 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ২৭ হাজার ৮৫৩টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনলাইনে বিক্রি হবে ১২ হাজার ১৫৭টি এবং কাউন্টারে বিক্রি হবে ১৫ হাজার ৬৯৬টি।