আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, এ জন্য তো আসিনি। ঢাকার আদালতের একজন বিচারক বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে আজ বুধবার এ কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সা‌বেক সভাপ‌তি, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রিমান্ড শুনানিতে বিচারকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। 

তখন বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারেন, ইউ মে লিভ। অথবা আপনাদের যদি ওই রকম শক্তি–সামর্থ্য থাকে তাহলে আমাদের অন্য কোথাও পাঠাবেন। আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, এ জন্য তো আসিনি। আমরা ঢাকা কোর্টে থাকতে আসিনি।’

বিকেলে আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মাহাবুল ইসলাম।

শুনানির শুরুতে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিকে রিমান্ডে চাওয়ার কারণ জানতে চান। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে জানান। এরপর আসামির রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান বিচারক। উত্তরে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতা ছিল। সরকারকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। বিভিন্ন প্রশ্ন করার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতাকারী বিএনপিপন্থী আইনজীবী কথা বলতে চাইলে তাঁকে থামিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই উত্তর চান বিচারক। এ সময় কথা বলতে চাওয়া আইনজীবীর নাম জানতে চাইলে একপর্যায়ে আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। 

এরপর বিএনপিপন্থী সিনিয়র অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী সবাইকে থামানোর চেষ্টা করলে এজলাসে শান্ত পরিবেশ ফিরে আসে।

তখন বিচারক আইনজীবীদের বলেন, ‘আপনাদের আচরণে আমি নিজেই লজ্জিত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে কীভাবে আদালত চলবে।’ 

বিচারক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি এর আগেও আমার কোর্টে শুনানি করেছেন। আপনি জানেন, আমি সবাইকেই প্রশ্ন করি। এর ফলে আদেশ লিখতে সুবিধা হয়। আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারেন, ইউ মে লিভ। অথবা আপনাদের যদি ওই রকম শক্তি–সামর্থ্য থাকে তাহলে আমাদের অন্য কোথাও পাঠাবেন। আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, এ জন্য তো আসিনি। আমরা ঢাকা কোর্টে থাকতে আসিনি।’

এরপর ওমর ফারুক ফারুকী বিচারককে বলেন, এখানে যাঁরা আইনজীবী হিসেবে সহযোগিতা করতে এসেছেন এরা সবাই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতিত। এ সময় ঢাকা বারের সিনিয়র সহসম্পাদককে দেখিয়ে বলেন, উনি তিনবার আওয়ামী লীগের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কাজেই সবার চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এরপর তিনি আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন।

আদালত আসামি পক্ষের বক্তব্য শোনেন। সেখানেও আসামি পক্ষের আইনজীবীকে কিছু প্রশ্ন করেন বিচারক। এরপর আদালত আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদেশের পর আইনজীবীরা আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবক নিহত হন। এই ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নজরুল ইসলামকে।