বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব) কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে এক নারীর কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি নিজেকে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক (অডিট, অ্যাডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট) পরিচয় দিয়েছিলেন দিয়ে প্রতারণা করেন বলে জানানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার ওমর আলী লেনের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম—জাবের হোসেন চৌধুরী ওরফে জাহিন চৌধুরী। তিনি ফেনী জেলার দাগনভূঞা থানার রামনগর গ্রামের জাহেদ চৌধুরীর ছেলে।

পিবিআই বলছে, সাকিনা মল্লিক নামে এক শিক্ষিকা চলতি বছরের গত ২৮ জানুয়ারি একটি অনলাইন গ্রুপের সঙ্গে নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যান। ওই গ্রুপের সদস্য হিসেবে আসামি জাহিন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। জাহিন চৌধুরী নিজেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অডিটের সহকারী পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জাহিনের সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ হতো।

ওই অনলাইন গ্রুপের সঙ্গে সাকিনা মল্লিক ও জাহিন চৌধুরীসহ আরও বেশ কিছু সদস্য চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর শাপাহারের এগ্রো ফার্মে ও পরের দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান। সিলেট থেকে আসার কিছুদিন পর জাহিন চৌধুরী তাঁকে জানান যে, চাকরির সুবাদে সরকার তাঁকে ৮৫ লাখ টাকার একটি গাড়ি দেবে। ওই টাকার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকার ব্যাংক স্টেটমেন্ট অফিসে জমা দিতে হবে। জাহিন চৌধুরী জানায় ওই ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে তাঁর ২৮ লাখ টাকা কম আছে। এ কারণে জাহিন সাকিনার কাছ থেকে টাকা ধার হিসেবে চান। সাকিনা মল্লিককে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল শাখার হিসাব নম্বরে তিন দিনের জন্য ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য অনুরোধ করেন জাহিন। তখন সাকিনা সরল বিশ্বাসে জাহিনের কথায় রাজি হয়ে ২৮ মার্চ মিরপুর-১ সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে তাঁর নিজের নামে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব থেকে ১১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিকস ফান্ড ট্রান্সফার করেন।

পিবিআই জানায়, পরে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও জাবের হোসেন চৌধুরী টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে অভিযোগকারী সাকিনা মল্লিক জাহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পান। তখন সাকিনা মল্লিকের সন্দেহ হলে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি জানতে পারেন, জাহিন চৌধুরী নামে সেখানে কেউ চাকরি করেন না। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ওই ঘটনায় তিনি গত ১৭ এপ্রিল মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মিরপুর মডেল থানা-পুলিশ তদন্ত করে আসামিকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা চেয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন।

পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর উত্তর কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গ্রেপ্তার জাবের হোসেন চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন-তিনি বেকার হলেও নিজেকে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি লোকজনকে চাকরি দেওয়া, স্বর্ণের বার ও কম মূল্যে গাড়ি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।’

পিটিআইয়ের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘টাকা-পয়সা আছে এমন বয়স্ক ও বিধবা মহিলা জাবের হোসেন চৌধুরীর মূল টার্গেট। তিনি এর আগেও একটি প্রতারণার মামলায় চট্টগ্রামের হালিশহর থানা-পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে একইভাবে বিভিন্ন লোকদের প্রতারিত করছেন।’

গ্রেপ্তার জাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর এবং চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় আরও মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।