Ajker Patrika

ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, নিকেতন ক্লাব থেকে অনুসরণ করে গুলশানে গিয়ে ব্যবসায়ীকে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৪
নিহত সুমন। ছবি: সংগৃহীত
নিহত সুমন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মহাখালী এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন ওরফে টেলি সুমনকে (৩৩) খুনের টার্গেট করা হয় নিকেতন এলাকার একটি ক্লাব থেকে। হত্যার আগে ওই ক্লাবেই খুনিদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান সুমন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে পুলিশ প্লাজার সামনে এসে বসলে, সেখানেও আরেক দফায় খুনিদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমনকে লক্ষ্য করে পরপর পাঁচটি গুলি করা হয়। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন।

অভিযুক্তরা নিহত ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমনের পূর্বপরিচিত ছিল বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের। এর আগেও একাধিকবার সুমনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে পরিবার। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার চাঁদা নিয়ে দ্বন্দ্ব বলে ধারণা পুলিশ ও স্বজনদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে সুমনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে মামলাটি করেন সুমনের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সুমনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের সালাইপুরে। তাঁর বাবার নাম মাহফুজুর রহমান। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় থাকতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মারুফ আহম্মেদ বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে। আজ-কালের মধ্যে আপডেট পাওয়া যাবে।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে আগে থেকে একটি পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল সুমনের। পুলিশ প্লাজার সামনে হত্যার আগে খুনিরা সুমনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ায়। এর কিছু সময় আগে নিকেতনের একটি ক্লাবেও খুনিদের সঙ্গে সুমনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ক্লাবটি একটি রাজনৈতিক দলের নামে চলছে। নিহত সুমনের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও চুরির ছয়-সাতটি মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মহাখালী এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামক ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি পক্ষ ব্যবসা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। এর জেরে তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা।

সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই বাদশা মিয়া বলেন, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলের সঙ্গে তাঁর ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এর আগে রুবেল তাঁর ব্যবসায়িক সাইট নিয়ে নেয়। পরে মীমাংসার পর সুমন আবার ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে রুবেল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বাদশা মিয়া।

এ ঘটনায় মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে গুলশান থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বনানী থানাধীন মহাখালী টিবি গেট এলাকায় প্রিয়জন নামক ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন সুমন ওরফে টেলি সুমন। ইন্টারনেট ব্যবসা করার কারণে একই এলাকায় তাঁর কিছুসংখ্যক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়। ওই প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন সময় সুমনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। জীবনের ঝুঁকিতে আছেন বলে প্রায়ই স্ত্রীকে বলতেন সুমন।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সুমন গুলশান ১ পুলিশ প্লাজার উত্তর-পশ্চিম পাশে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে থাকা বেঞ্চে বসে বিশ্রাম করাকালে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তখন তিনি নিজের জীবন রক্ষার্থে রাস্তার ওপর দিয়ে দৌড়ে গুলশান শুটিং ক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে পাকা রাস্তার ওপর রোড ডিভাইডারের কাছে পড়ে যান।

মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পরপরই মাঠে নেমেছে ডিবি। মূল কিলারকে ধরার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত