মাস্টারমাইন্ড শাহিন ছাড়াও দু-একজন আসামি গ্রেপ্তার বাকি আছে: ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৪, ১৫: ৪২

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহিন ছাড়াও আরও দু-একজন আসামি গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। 

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে গ্যাস বাবু জানিয়েছেন—‘ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু তাঁর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে কোথাও ছুড়ে ফেলেছেন’, ওই মোবাইলগুলো উদ্ধারে ডিবি পুলিশ কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আলামত নষ্ট করার তথ্য আমরাও জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতে একটি চিঠি দিয়েছি। যেহেতু গ্যাস বাবুর মোবাইলে ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে। যদিও দুই পক্ষের কাছে ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে। এর মধ্যে এক পক্ষের ডিজিটাল এভিডেন্স আমরা পেয়েছি। গ্যাস বাবুকে আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং মোবাইলগুলো কোথায় ফেলে দিয়েছেন, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করব।’ 

মিন্টুর রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে তাঁকে কেন কারাগারে পাঠিয়েছে ডিবি, এ প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন তার সেটিসফেকশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে আপাতদৃষ্টিতে আর কিছু জানার নেই, তিনি সকল কিছু জানতে পেরেছেন, তখন তিনি আদালতের মাধ্যমে আসামিকে জেল হাজতে পাঠাতে পারেন। তবে আবার যদি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন-ওই আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন, তখন তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাবেন।’ 

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ডিবি কোনো চাপে আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘মতিঝিলের টিপু হত্যা, কামরাঙ্গীরচরের শিল্পপতি হত্যাকাণ্ড ও ফারদিন হত্যাকাণ্ডসহ অনেক হত্যাকাণ্ড কিন্তু ঢাকা শহরে ঘটেছে। ডিবির চৌকস টিম কিন্তু প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করেছে। এমপি আনার কলকাতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু বের করতে ডিবি পুলিশের দল রাত-দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের টিম নেপালে গিয়েছে এবং আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে সিয়াম গ্রেপ্তার হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া কলকাতায় গিয়েও আমরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি আলামত উদ্ধারে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কিলার শিমুল ভুঁইয়াসহ আরও অনেককে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে চারজন আসামি বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা যদি চাপ অনুভব করতাম, তাহলে এই মামলায় আমাদের এতো অ্যাচিভমেন্ট হতো না।’ 

ডিবি প্রধান হারুন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন-এই মামলার তদন্তকাজে কোনো চাপ নেই। তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন নিরপেক্ষভাবে মামলার তদন্ত করা হয়। ডিবি নিরপেক্ষভাবে এ মামলার তদন্তকাজ করছে। এ মামলায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না এবং কাউকে অযথা ডাকাডাকি করা হবে না। সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’ 

আখতারুজ্জামান শাহিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি আছে কি না, জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ অনেকটা কনক্লুসিভ পর্যায়ে। আমরা অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। কিছু কিছু নাম আমরা পেয়েছি, তাদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড শাহিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের একটা বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে, সেহেতু আমরা ভারতীয় পুলিশকে বলেছি-যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আমরা টিম নিয়ে গিয়ে কথা বলেছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে আমরা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সকলেই কাজ করছি। আরও দু-একজন আসামি বাকি রয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছি। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়।’ 

এমপি আনারের মেয়ে ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্য কলকাতায় যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘ভারতীয় পুলিশ দূতাবাসের মাধ্যমে ডরিনকে জানিয়েছে ভারতে যাওয়ার জন্য। ডরিনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, সে মনে হয় কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। স্বাস্থ্য ভালো হলে, শিগগিরই ভারতে যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত