Ajker Patrika

দরজিপাড়ায় মজুরি বাড়লেও কমছে কাজ

  • তৈরি পোশাকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা, হতাশ কারিগরেরা।
  • করোনার গৃহবন্দী সময়ে বহু অনলাইনভিত্তিক পোশাক বিক্রেতা তৈরি হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০১: ৪১
ঈদ সামনে রেখে কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগরেরা। গত শনিবার রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি দরজি দোকানে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈদ সামনে রেখে কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত কারিগরেরা। গত শনিবার রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি দরজি দোকানে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কেউ ত্রস্ত হাতে কাটছেন কাপড়, কেউ ব্যস্ত সেলাইয়ে, কেউ আবার সদ্য বানানো পোশাকটিকে ভাঁজমুক্ত করে তুলে রাখতে চালাচ্ছেন ইস্তিরি। রমজান মাসে রাজধানীর টেইলার্সগুলোর চিরচেনা চিত্র এটি। এবারও তার তেমন ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের আগে নির্দিষ্ট দিনে অর্ডারদাতাদের পোশাক বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। তবে কাজের ব্যস্ততা থাকলেও সার্বিকভাবে দরজিঘরের মালিকেরা হতাশ। এর কারণ তৈরি পোশাকের (রেডিমেড) দাপটে বেশ কয়েক বছর ধরে পোশাক বানানোর প্রবণতা কমেই চলেছে।

দরজিপাড়ার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই নতুন পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দু-চার জায়গায় আবার ২৮ রমজান পর্যন্ত নেওয়া হবে অর্ডার! তাদের আছে এমন পরিস্থিতি সামলানোর বিশেষ ব্যবস্থা।

রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানসন শপিং সেন্টারের অনন্যা ফ্যাশন টেইলার্সের মাস্টার মোহাম্মদ জাকির। ১৯৮৮ সাল থেকে এই মার্কেটে দরজির কাজ করছেন। জাকির বললেন, ‘লোকে আজকাল রেডিমেড পরে বেশি। আমাদের কাজ কম।’ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও এবার খদ্দের কম থাকার কারণ হিসেবে দায়ী করলেন এই প্রবীণ দরজি। তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা তো ভালো না। আগে এমন সময়ও ছিল যে একজন অনেকগুলা জামা বানাইত! এখন হয়তো এক সেট বানায়।’

একই মার্কেটের নিপুণ লেডিস টেইলার্সের কর্ণধার জাকির হোসেন বলেন, ‘আগে কাজের চাপে ১০-১২ রোজার পর আর অর্ডার নিতে পারতাম না। কিন্তু এখন চাপ কম। ২৫-২৬ রোজা পর্যন্তও কাজ নেওয়া যাবে।’

গত দিনদুয়েক রাজধানীর ব্যস্ত ও জনাকীর্ণ এই মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশপাশে হকারদের অস্থায়ী স্টল এবং ভবনের জামাকাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড় থাকলেও দরজির দোকানগুলোয় ভিড় কম। অনন্যা ফ্যাশনের মাস্টার মোহাম্মদ জাকির বলেন, ‘হকারদের জ্বালায় মানুষ তো মার্কেটের ওপরে উঠতেই পারে না। রাস্তায় জ্যাম, হকারদের কাছে মানুষের ভিড়। অথচ আমাদের এলাকা ফাঁকা।’

দরজি মাস্টার ও কারিগরেরা জানান, বছর কয়েক আগে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই মূলত তাঁদের কাজের চাপ ধীরে ধীরে কমেছে। তার আগে ঈদের মৌসুমে বাড়তি কারিগর নেওয়া হতো। এখন সেটারও আর প্রয়োজন হয় না। আজকাল নানা বিচিত্র ডিজাইনের তৈরি পোশাকে আগ্রহ বেড়েছে। করোনার গৃহবন্দী সময়টাতে বহু অনলাইনভিত্তিক পোশাক বিক্রেতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের অনেকেই প্রতিযোগিতামূলক দামে বিভিন্ন ধরনের পোশাক বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাই কাপড় কিনে পোশাক তৈরির পেছনে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে চাচ্ছেন না অনেকেই। তা ছাড়া অনেক নারীও এখন নকশা বলে দিলে ঘরে বসে কম মজুরিতে পোশাক সেলাইয়ের কাজ করে দেন। এসব কারণে দরজির দোকানে খদ্দের আসা কমছে।

অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, দরজির দোকানগুলোর মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে তা আরও বেড়ে যায়। গাউছিয়া মার্কেটে আসা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বললেন, ‘টেইলার্সে ড্রেস বানাতে দিলে খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। আজকাল ৭০০ টাকার নিচে মজুরি হয়ই না। এই টাকায় তো আমি একটা নতুন কুর্তিই কিনে ফেলতে পারি। তা ছাড়া টেইলার্সে একটা ড্রেস দিয়ে কয়েক দিন তার পেছনে ঘুরতে হয়। সময়, শ্রম, টাকা—সবই যায়।’

ঈদের কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী শামসুন্নানাহার মুক্তা বলেন, ‘গত বছরের ঈদের সময়ও ৫০০ টাকা দিয়ে থ্রি-পিস বানাতে পারছি। এ বছর বলতেছে ৮০০-র নিচে হবে না। এক বছরের মধ্যে কী এমন হইল যে মজুরি প্রায় ডাবল করতে হবে! জামার কাপড় কিনে বাসায় রেখে দিছি। পরে বানাব। ঈদের দিন নতুন জামা পরতেই হবে, এমন কোনো কথা নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

কালো টাকা সাদা করেছেন সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

চেয়ার দখল করে চাকরি হারালেন বিএমডিএ প্রকৌশলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত