জাবি উপাচার্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিনেট সভা আজ

বেলাল হোসেন, জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৫১
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ১১: ১৮

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপাচার্য নির্বাচন। এতে তিনটি প্যানেল থেকে আওয়ামীপন্থী ৯ জন শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের পক্ষে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে। এদিকে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় উপাচার্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

উপাচার্য পদে ৯ জন প্রার্থীর নেতৃত্বে রয়েছেন সাময়িক উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন। এ ছাড়া সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিনের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থীদের আরও একটি ঘোষণার গুঞ্জন রয়েছে।

অধ্যাপক নূরুল আলমের প্যানেল সহযোগী হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ্।

প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের উন্নয়ন এবং সব ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনার জন্য আমরা অংশ নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের উন্নতির স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’

সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেনের নেতৃত্বে উয়ারী-বটেশ্বরের আবিষ্কারক প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা নেই বলে মনে করেন আমির হোসেন। অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করে ছাত্রবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজ সম্পর্কের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরকে মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। 

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের একাংশের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবিক অর্থেই একটি কার্যকর গবেষণাবান্ধব ও ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। সিনেট সদস্যদের প্রতি আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য প্যানেলে মনোনীত করুন।’ 

এই সিনেটররা জানান, ‘মোতাহার-কাফি-তপন এবং নূরুল-অজিত-এন্দেল্লাহ্ প্যানেল সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পন্থী বলে বিবেচিত। এ ছাড়া আমির-মোস্তাফিজ-নাজনীন প্যানেল সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের অনুসারী।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিতব্য বিশেষ সিনেট সভার একমাত্র আলোচ্যসূচি ‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন’। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ৮১ জন সিনেটর, যেখানে ছাত্র সংসদ জাকসু সক্রিয় না থাকায় কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই।’

রহিমা কানিজ বলেন, ‘সিনেট সভা চলাকালীন একজন প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর মাধ্যমে প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়া যাবে। সভার নির্দিষ্ট সময় প্রচারণার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। পরে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন শেষে প্রথম তিনজনের একটি প্যানেল আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির কাছে মনোনয়নের জন্য পাঠানো হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর ভেতরে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। যাদের একটি পক্ষ শোকাবহ আগস্টে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আখতার।

তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর সমর্থিত প্যানেল হিসেবে কাজ করছে মোতাহার-কাফি-তপন প্যানেল। এ বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস দাবি করেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমাদের প্যানেলটি হচ্ছে শিক্ষক পরিষদের দলীয় প্যানেল।’

অন্যদিকে সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাময়িক উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, ‘এই নির্বাচনে শিক্ষকের চেয়ে সিনেটরদের ভূমিকা বেশি। স্বাভাবিকভাবে এখানে শিক্ষক সংগঠন কোনো ভূমিকা রাখছে না। আমাদের প্যানেল প্রশাসনিকভাবেই দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী বলেই আমরা আট বছর পর নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চা থমকে আছে। সেটাকে গতিশীল করার জন্যই প্রথমে আমার পদ (উপাচার্য) থেকেই নির্বাচন শুরু করা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ছড়িয়ে দেবে।’

এদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর পক্ষে আমির হোসেন-মোস্তাফিজুর রহমান-পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর আগে আমির হোসেন ও নূরুল আলমের ঐক্য প্যানেল গঠনের আলোচনা চললেও তা বিভিন্ন কারণে সফল হয়নি।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সুসংহত করে গড়ে তোলা। এ জন্য শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে অধ্যাপক আমিরের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে চাই।’

এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ঘরানার দুটি শিক্ষক সংগঠন ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে প্যানেল নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃত্ব।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধির পদ শূন্য, দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি অবসরে, একজন প্রেষণে কোষাধ্যক্ষ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্বে, এক শিক্ষকের বিদেশে অবস্থান, একজন শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত, একজন কলেজ অধ্যক্ষ অবসরে এবং একজন মনোনীত গবেষক পদে না থাকায় বর্তমানে ৮১ জন সিনেটর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বৈধ ভোটার বলে বিবেচিত হবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত