Ajker Patrika

পুরোনো আইনে খোলস বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ৩৫
পুরোনো আইনে খোলস বদল

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন এনে আইনটি নতুন নামে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ আইনের পরিবর্তিত নাম হবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় সংসদ অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ পাস করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আসছে, তা তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। মোটা দাগে এই আইনে পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি জানান, প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা যেমন কমানো হয়েছে, তেমনি অনেকগুলো অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। তবে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক যেসব ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আছে, সেগুলো প্রস্তাবিত নতুন আইনে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। 
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খুবই বিতর্কিত একটি ধারা হলো ২৮। জামিন অযোগ্য এই ধারা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত এমন কিছু ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রকাশ করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সাজা আরও বেশি হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এটি (২৮ ধারা) পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে এবং সাজাও কমানো হয়েছে। এখন এই অপরাধে সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরেক বিতর্কিত দিক হলো ধারা ২৯। এই ধারার বিষয়বস্তু ছিল মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও সম্প্রচার। ধারাটি সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।

এতে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। 

২৫ লাখ টাকা জরিমানা অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তাই এই জরিমানার বিধান বাস্তবসম্মত কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, অনধিক ২৫ লাখ টাকা বলা হয়েছে। তবে আদালত চাইলে ১ টাকাও জরিমানা করতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।
প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১, ৩১ ও ৩২-এ পরিবর্তন এনে সাজার পরিমাণ কমানোর কথা বলা হয়েছে। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার করলে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। নতুন আইনে এই সাজা কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় এমন কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে প্রকাশ করলে অপরাধী অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই বিধান আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায়। প্রস্তাবিত আইনে এই ধরনের অপরাধের সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। এটি কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে।

নতুন আইনের কার্যক্রম কখন শুরু হবে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিলটি উঠবে। সেই অধিবেশনে আইনটি পাস হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এটি পাস হলে আগের আইনে দায়ের করা মামলাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যত মামলা
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর থেকে আইনটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার আসামিদের বড় অংশই সাংবাদিক। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ মামলা করেছেন ক্ষমতাসীন দল বা তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকেরা। চার বছরে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এই আইনে ১৪০টি মামলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় আসামিদের তিনজনের একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৬০ শতাংশ মামলা হয়েছে ফেসবুকে কোনো কিছু লেখা, শেয়ার করা বা সমর্থন জানানোর অভিযোগে।  

সিজিএস আরও দেখেছে, ১ হাজার ১০৯টি মামলায় মোট ২ হাজার ৮৮৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২৬ মাসে ডিএসএ আইনে মামলা করেছেন ক্ষমতাসীন দল বা তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকেরা এসব আইনের বেশির ভাগ ভুক্তভোগী। ৮৯০ মামলার মধ্যে ২০৬টি করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া পুলিশ, র‍্যাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাও এই আইনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলা করেছে।

সিজিএসের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে ২০৭ জন সাংবাদিক, ৪১ জন শিক্ষাবিদ, ১০ এনজিও ও অধিকারকর্মী, ২৫৪ জন রাজনীতিক, ৭৯ জন ছাত্র, ৩২ জন সরকারি কর্মচারী, ৫৩ জন বেসরকারি কর্মচারী, ৭৯ জন ব্যবসায়ী, ২১ জন আইনজীবী, ৮ জন ধর্মীয় নেতা, ৩৬ জন অন্যান্য পেশার। ১ হাজার ৪২৪ জনের পেশা জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এসআইসহ ৬ জন টেঁটাবিদ্ধ, বাড়িঘরে আগুন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এসআইসহ অন্তত ছয়জন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা গ্রামে মো. জহির ও খলিলুর রহমানের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টেঁটাবিদ্ধ সিরাজদিখান থানার এসআই হাফিজুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মাটি কাটা নিয়ে কংশপুরা গ্রামের খলিলুর রহমান ও পূর্ব রামকৃষ্ণদি গ্রামের মো. জহিরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কংশপুরা গ্রামে দুই পক্ষের লোকজন টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষ থামাতে সিরাজদিখান থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে এসআই হাফিজুর হাতে টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহানারা আক্তার বলেন, পুলিশের এসআইয়ের ডান হাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘জহিরের অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়ায় লোকজন নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। আমার কয়েকজন লোক টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে মো. জহির বলেন, ‘খলিলের সঙ্গে আমার বিরোধ অনেক আগের। আজকের ঘটনায় আমি জড়িত নই।’

লতব্দী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন খান খোকন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও ভরাটকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজকের ঘটনায় কয়েকজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা দায়ের করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরে নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ ২২ দিন পর পঞ্চগড়ে উদ্ধার

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি 
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছায় নিখোঁজের ২২ দিন পর আক্তারুজ্জামান (৪৬) নামের এক পুলিশ সদস্যের অর্ধগলিত লাশ পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদরের ৬ নম্বর সাতমোড়া ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকার একটি আখখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার নিহত আক্তারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার রাত ৬টা ১৫ মিনিট) পরিবারের সদস্যদের পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা জানান নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীর ভাই মামুনুর রশীদ মামুন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতা দেখে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি তাঁর বোনের স্বামীর।

জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা থানায় পৌঁছালে সেটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আক্তারুজ্জামান চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জামলতা গ্রামের মৃত আনিচুর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি খুলনা রেঞ্জের বাগেরহাট জেলার রামপাল থানায় কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, লাশটির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে লাশটির কোনো তথ্য না থাকায় জানার জন্য চেষ্টা করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। ক্লুলেস লাশটির পরিচয় শনাক্তে একমাত্র সূত্র হয় উদ্ধার করা লাশের আন্ডারওয়্যার।

যা ছিল পুলিশের লোগো-সংবলিত। পরে সেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতার ছবি নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীকে নিয়ে দেখালে তিনি তাঁর স্বামীর পোশাক বলে শনাক্ত করেন।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী শাহিনা আক্তার শিমা চৌগাছা থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তানসহ চৌগাছা শহরের ইছাপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আক্তারুজ্জামান। গত ২৬ নভেম্বর পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। পরদিন ২৭ নভেম্বর সকালে মহেশপুর যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।

জিডিতে শাহিনা আক্তার শিমা বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোথাও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, আক্তারুজ্জামান তাঁর ব্যবহৃত দুটি ফোন বাসায় রেখে গিয়েছেন। ফলে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সীমান্তে বাঘ আতঙ্ক, বিজিবির সতর্কতা জারি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০২
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারত থেকে বাঘ আসার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৮ নম্বরের ৩ নম্বর উপপিলারের একপাশে ভারতীয় কোচবিহার রাজ্যের মাথাভাঙ্গা থানার বালারহাট এলাকা এবং অন্যপাশে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ও জোংড়া ইউনিয়ন সীমান্তের মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী এলাকা। কাঁটাতারবিহীন ওই সীমান্ত এলাকার ভারতের প্রায় ৪০০ গজ অভ্যন্তরে বালারহাট এলাকায় পার্শ্ববর্তী বন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে একটি বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় ভারতের স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা বাঘটিকে ধাওয়া দিলে বাঘটি পালিয়ে যায়। সীমান্তে বাঘ আসায় এই শোরগোলের খবর ভারতের ১৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রীমুখ ক্যাম্পের বিএসএফের টহল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) নাজিরগোমানী ক্যাম্পের টহল দল জানতে পারে। এ ঘটনায় রাতে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলে বিজিবি।

এক সপ্তাহ আগেও ভারতের ওই গ্রামে দুটি বাঘ এসেছিল। স্থানীয় বন বিভাগের লোকজনের সহায়তায় একটি বাঘ আটক করা হয় এবং অপর বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ককোয়াবাড়ী এলাকার আবেদা বেগম (৫৫) বলেন, ‘বিজিবি মাইকে বলেছে এটা শুনেছি। বাঘ দেখিনি, তবে এতে ভয় লাগে।’

একই এলাকার ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা ভারতে চিল্লাচিল্লিতে আমরা খবর পাই বাঘ নাকি বের হয়েছে, পিটাপিটি (ধাওয়া) করেছে। ওই সময় শুনি বাঘ বাংলাদেশেও ঢুকতে পাড়ে। এতে এলাকাবাসী ভয় পেয়ে সতর্ক হয়।’

এ ব্যাপারে নাজিরগোমানী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) মোবাইল নম্বরে কল দিলে কোনো সাড়া মেলেনি। তবে বিজিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘বাঘ তো বাংলাদেশে আসেনি। কেউ দেখেওনি। সীমান্তে এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাটি তিলকে তাল বানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে, রাখা হবে হিমঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১১
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। সেখানে হিমঘরে মরদেহটি রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৫৮৫ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ সময় হাদির মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত