তিন চাকার স্কুল ভ্যান: স্কুলের পথে ঝুঁকির যাত্রা

  • ব্যস্ত সড়কেও চলে হালকা গাড়িগুলো
  • মোটর যুক্ত হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে
  • সুনির্দিষ্ট নীতিমালার তাগিদ পুলিশের
আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ২৪
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৫৭
Thumbnail image
কর্মব্যস্ততার কারণে রাজধানীর অনেক অভিভাবকই সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়া করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ভরসা ‘স্কুলভ্যান’। সময় বাঁচাতে সম্প্রতি এসব ভ্যানেও মোটর যুক্ত হয়েছে। বেপরোয়া চলাচলে শিশুশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইল এলাকায়। ছবি: মেহেদী হাসান

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো খোদ রাজধানী শহরেও প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্কুল ভ্যানে’ যাতায়াত করে হাজারো স্কুলশিক্ষার্থী। অনেকটা খাঁচার মতো তিন চাকার ওপর হালকা কাঠামোর এসব ভ্যানে ১০ জন করে শিশুশিক্ষার্থী আনা-নেওয়া করা হয়। অল্প সময়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য সম্প্রতি এই বাহনে যুক্ত করা হয়েছে মোটর। মোটরযান হিসেবে কারিগরিভাবে মানসম্পন্ন না হওয়ায় এসব যানের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।

স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকেরা বলছেন, উপায় না পেয়েই তাঁরা সন্তানদের এসব ভ্যানে তুলতে বাধ্য হন। নিজেদের ব্যস্ততার পাশাপাশি সবার সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়ার নিরাপত্তা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ের জন্য তাঁরা বাচ্চাদের এভাবে স্কুলে পাঠান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মব্যস্ত মা-বাবার জন্য এই সেবা কিছুটা সুবিধাজনক হলেও এতে শিশুশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে হালকা কাঠামোর স্কুল ভ্যানের এমন অনিয়ন্ত্রিত চলাচল শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য হুমকি।

আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক সেবাটির বিষয় খতিয়ে দেখতে রাজধানীর কয়েকটি এলাকার স্কুল কর্তৃপক্ষ, ভ্যানমালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানা যায়, শিশুদের বহন করা এসব চালকের বাড়তি সতর্কতা বা দক্ষতার বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এসব যানের জন্য নেই কোনো নীতিমালাও।

রাজধানীর আজিমপুর, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন শুধু এ কয়টি স্থানে প্রায় ৫০০ স্কুল ভ্যান চলাচল করে। দূরত্ব অনুযায়ী অভিভাবকদের প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়।

রাজধানীর নামকরা কয়েকটি স্কুলের নাম লেখা ভ্যানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাস্তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এসব ভ্যানের কোনো সম্পর্ক নেই। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ভ্যানগুলোর গায়ে স্কুলের নাম লেখা থাকলেও স্কুলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ আবার জানিয়েছে, প্রচার হিসেবে স্কুলের নাম ভ্যানের গায়ে লেখার জন্য প্রতিবছর ভ্যানমালিকদের তাঁরা কিছু টাকা দেন।

‘মরিয়ম পরিবহন’ নামের একটি স্কুল ভ্যান সার্ভিসের পরিচালক মো. রফিক জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে তাঁরা এই সেবা দিয়ে আসছেন। কখনো কোনো কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তা বা ভাড়ার নীতিমালা কিংবা নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেনি।

ছেলেকে লালবাগের একটি স্কুলে পাঠানো অভিভাবক রেজওয়ানা আক্তার বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সকালে কাজে যাই। বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেওয়ার মতো আর কেউ নেই। স্কুলের নিজস্ব পরিবহন না থাকায় এসব ভ্যানের দ্বারস্থ হতে হয়। ভ্যানগুলো যথেষ্ট নিরাপদ নয়। এ জন্য প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় থাকি।’

প্রবীণ গণশিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়নকর্মী রাশেদা কে চৌধূরী এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্কুল ভ্যানগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই যে তা নবায়ন করার সময় বাহনের ফিটনেস বা নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। প্রয়োজনের কারণে এই পরিবহন একধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকতা বা জবাবদিহি নেই। এসব যানের দুর্ঘটনার দায় আসলে কার হবে?’

বিশ্বের বহু দেশে বড় স্কুলবাস আছে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল ছাড়া কোথাও স্কুলবাসের প্রচলন নেই।’

ঢাকার বড়, অতি ব্যস্ত সড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভ্যান চলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই এটি বন্ধ করে দিতে পারি না। কারণ, তাহলে সমস্যায় পড়ে অভিভাবকেরা আন্দোলনে নামবেন। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে এ ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত