বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ছাত্রলীগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেছেন, বুয়েটে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবে ছাত্রলীগ। এছাড়া বুয়েটকে স্মার্ট ছাত্ররাজনীতির মডেল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও গ্রহণ করবে এই ছাত্র সংগঠন। 

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বুয়েটে চলমান আন্দোলন ও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বুয়েটে এমন ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে, যা শহীদ শাফী ইমাম রুমীর মতো বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ত্যাগ করে দেশের জন্য হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করতে শেখাবে কিংবা উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়তে নৈতিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে।’ 

এ সময় বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে এনেই কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দায়িত্ব শেষ করবে না। দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পিত আগামী দিনের উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নত ও স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেওয়ার জন্য মডেল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটকে গ্রহণ করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক যাত্রায় বুয়েটের সব শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রগতিশীল সব ছাত্রসংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, আসুন গৎবাঁধা ধারা বাদ দিয়ে আধুনিক, উন্নত ছাত্ররাজনীতির চর্চা শুরু করি বুয়েট থেকে। সুন্দর, স্বনির্ভর, সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়তে আজকের প্রজন্ম আর কালক্ষেপণ করবে না—এটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আহ্বান।’

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘রাজনীতিতে কিছু ঘুণে ধরা উপাদান আছে, সেগুলো সরিয়ে নতুনত্বের সূচনা করবে বুয়েট। এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক, অ্যালামনাই, বুয়েটে পড়াশোনা করা সাংসদসহ সবাই আলোচনা করে কোড অব কনডাক্ট তৈরি করুন, যাতে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির সূচনা করা যায়।’ 

বুয়েটে কমিটি দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কমিটির চিন্তা করছি না। নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করার জন্য কাজ করে যাব।’ সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি। 

কর্মসূচিগুলো হলো—বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হলে সিট ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান। আধুনিক, স্মার্ট, পলিসিনির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতামত আহ্বান ও আলোচনা। সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদের কালো ছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন এবং বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা। পরবর্তী সময়ে এসব কর্মসূচি পালনের দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমদে শামীম, ছাত্রলীগের সভাপতিকে ঢুকতে সহযোগিতা করার অভিযোগে বুয়েটের হল থেকে সিট বাতিল হওয়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।