ঢাকার আরও ১৭ খালের দায়িত্ব পাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২১, ১৯: ১৩
আপডেট : ১৮ মে ২০২১, ১৯: ১৫

ঢাকা: ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার কারণে কয়েক দশক ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে সিটি করপোরেশন। এই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী মূলত খালগুলো দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে যাওয়া। কিন্তু এসব খাল অন্যান্য সেবাসংস্থার অধীনে থাকায় জলবাদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘদিনের দাবির মুখে গত বছর থেকে এসব খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রথম হস্তান্তর করা হয়। খালগুলো উদ্ধার, বর্জ্য পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনা, খালের পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সবুজায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

এবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে থাকা ১৭টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা মহানগরীর খাল এবং প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুই মেয়র ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, খাল সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রাজধানীতে আরও ১৭টি খাল রয়েছে। এসব খাল ও জলাশয়ের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। রিপোর্ট অনুযায়ী হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, দুই সিটি করপোরেশন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া খাল ও জলাশয়ের সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণে তাদের পরিকল্পনার কথা জানাবে।

এদিকে ঢাকার মহানগরীর অনেক বাসা-বাড়ির মালিক সেপটিক ট্যাংক না রেখে সুয়ারেজের লাইন সরাসরি খালে দিয়ে থাকেন। তারা নিজেদের সেপটিক ট্যাংক তৈরি না করলে আগামীতে এসব লাইন বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আরও বলেন, রাজধানীতে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে হাতিরঝিলের সব বন্ধ স্লুইসগেট খোলা থাকবে।

সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

গত বছর সিটি করপোরেশনের কাছে খাল হস্তান্তরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, ১৯৮৮ সালের আগে ঢাকার খালগুলো তদারকি করতো তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই খালগুলো ওয়াসার কাছে গেলো তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তাই এতদিন খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অনেকটা সমন্বয়হীনতা ছিল। এখন ওয়াসা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং পাউবোর অধীনে থাকা খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার ফলে নগরে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে আশা মন্ত্রীর।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে জিরানী খাল, শ্যামপুর খাল, মান্ডা খাল থেকে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। সব বর্জ্য অপসারণও করা হয়েছে। জুনের মধ্যে কালুনগর খালসহ বাকি খালগুলো বর্জ্যমুক্ত করার কথা জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র। খালগুলো উদ্ধারের পর বর্জ্য পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনা, খালের পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং সবুজায়নের কাজ করবে দুই সিটি করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত