মাথায় ও ঘাড়ে ৭ গুলি, ঘুমাতে যন্ত্রণা হয় ছাত্র আন্দোলনে আহত সাআদের

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩০
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪০
গুলিবিদ্ধ সালাউদ্দিন চৌধুরী সাআদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অসহযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের সালাউদ্দিন চৌধুরী সাআদ। ৪ আগস্ট তাদের মিছিল জেলা শহরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ সময় মাথা ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এখনো বিঁধে থাকা সাতটি গুলি নিয়ে তিন মাস যাবৎ অসহ্য যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চিকিৎসক অস্ত্রোপচারও করছেন না।

সাআদ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের শাহা চৌধুরী ও বাবলী আক্তারের বড় ছেলে। সাআদ আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসায় মিশকাতে পড়ছেন। তাঁর বাবা ২০২২ সালে সৌদি আরবে গিয়েছেন সংসারে সচ্ছলতা আনতে। মা একজন গৃহিণী। বর্তমানে জেলা শহরের উকিলপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তাঁরা। সাআদের ছোট ভাই অপূর্ব চৌধুরী। ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট বোন মারিয়াম আদর্শ নুরানি মাদ্রাসায় হিফজ পড়ছে।

সালাউদ্দিন চৌধুরী সাআদ বলেন, ‘আমি পড়তেছিলাম তখন। মিছিল বের হলে আমিও মিছিলে যোগ দেই। মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিস পর্যন্ত যাওয়া হয়। ওই সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী এসে প্রথমবার গুলি করলে সেই গুলি আমার হাতে লাগে। পরে যখন আরেকটা গুলি ভরতেছে, তখন আমি ওই জায়গা থেকে চলে আসতে চাই। যখন আমি চলে যেতে থাকি, তখন আরেকটা গুলি ছুড়লে সেই গুলি আমার মাথার পেছনে আর ঘাড়ে লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আমি সেখানে পড়ে যাই। তখন কিছু ছাত্র আমাকে উদ্ধার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারপর ছাত্ররা আমাকে পপুলার হসপিটালে নিয়ে যায়। ওইখানে চিকিৎসকেরা গুলি খুঁজে পাচ্ছিল না। যে জায়গায় গুলি লাগছিল, ওই জায়গাগুলো ফুলে গিয়েছিল। পপুলার হসপিটাল থেকে আসার দুই দিন পরে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মাথার এক্স-রে করাই। মাথায় ছয়টা গুলি ছিল। হাসপাতাল থেকে বলে দেওয়া হয়—গুলিগুলো না খুললে ভালো হবে, খুললে রিস্ক আছে। তাই হাসপাতাল থেকে খুলে দেয় নাই।’

সাআদ বলেন, ‘পরে ঢাকা গেলাম। পিজি হাসপাতালে। তারাও একই কথা বলছে। এখানে হবে না। মাথার গুলিগুলো খুলতে গেলে রিস্ক আছে। হাতে এক্স-রে করেছিলাম, হাতে দুইটা গুলি ছিল। ওইগুলোও খুলতে চাইতেছে না। বলতেছে, এইগুলোতে রিস্কে আছে। যদি ওপরে আসে চামড়ার কাছে, তাহলে ওইগুলা খোলা যাবে। পরে ওই জায়গা থেকে আইসা পড়লাম। তারপর কিছুদিন আগে একজনের সাথে যোগাযোগ করলাম, উনি পাঠাইলেন বার্ন হসপিটালে। ওই জায়গাতেও চিকিৎসা করতে চাইতেছে না। বলতেছে, এইগুলো খুলতে গেলে তোমার রিস্ক। তুমি যদি খুলতে চাও তাহলে খুইলা দিব, কিন্তু খুললে তোমার ক্ষতি। এখন এভাবেই চলতেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক বলছে, অপারেশন করলে যদি কোনো ক্ষতি হয়, এর দায়ভার আমরা নিতে পারব না। কারণ এটা যেহেতু শটগানের ছোট গুলি, খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় না। নড়াচড়া করে। তার ওপর আবার রক্ত আসলে ছোট গুলি খুঁজে পাওয়া আরও কষ্টকর। আপনি যদি বলেন তাহলে খুলে দিব।’

নিজের অসহ্য যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে সাআদ বলেন, ‘মাথায় ছয়টা আর ঘাড়ে ১টা ও হাতে দুইটা গুলি লাগে। হাতের একটা গুলি ডাক্তার বের করেছে। কিন্তু বাকিগুলো বের করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তাই বের করেনি। মাথার গুলির জন্য রাতে ঘুমাতে পারি না। বালিশে মাথা রাখলেই ব্যথা করে। পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়।’

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক অভি চৌধুরী বলেন, ‘আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা তাঁর চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা এবং আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করব।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহতদের তালিকা যাচাই-বাছাই চলছে। আমাদের এখানে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। তালিকায় না থাকলে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওইখানে যদি চিকিৎসা হয়, তাহলে আমরা তার চিকিৎসা এখানে করব। যদি না হয় তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত