রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর মতো ভুল করা যাবে না: জাফর ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৮: ১৭
Thumbnail image

লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর মতো ভুল আর করা যাবে না। সে জন্য তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক হতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। 

জাফর ইকবাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে একটা সত্যিকারের রেনেসাঁ যাকে বলে, একটা সংস্কৃতির বলয় গড়ে উঠেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, আগের সেই সাম্প্রদায়িকতা, হানাহানি আর ফিরে আসবে না। কিন্তু কিছুদিন পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল, মুক্তিযুদ্ধে কি এত মানুষ মারা গেছে? রাজাকারদের গাড়িতে মন্ত্রীর পতাকা তুলে দেওয়া হলো। আমাদের আর এমন ভুল করা চলবে না। আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম আছে, তাদের সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুশাসন শিক্ষা দিতে হবে।’ 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করতে হবে উল্লেখ করে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘এখন যারা নতুন প্রজন্ম আছে, তাদের অনেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখেনি। আমরা যে চেতনা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যে বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তা বাস্তবায়নের জন্য তরুণ প্রজন্মকে সম্প্রীতি বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করতে হবে।’ 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। 

সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে একাত্তরকে আমরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রমিথিউসের মতো দাঁড় করাতে পারিনি বলে আজকের এই সংকট। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ঠাঁই নাই। এ অবস্থায় আমরা যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।’

এ সময় গোলটেবিল আলোচনায় অন্য বক্তাদের মধ্যে ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে সম্প্রীতি বারবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখনো ধর্মের নামে, কখনো রাজনীতির নামে। সামনে নির্বাচন, নির্বাচন এলেই আমরা ভয়ে থাকি। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরে যে সহিংসতা হয়, তার শিকার হয় বেশির ভাগ সংখ্যালঘু।’ 

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের মূল চিন্তা ছিল অসাম্প্রদায়িকতা। এ কারণেই আওয়ামী মুসলিম লীগের মুসলিম বাদ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এই বাংলাদেশ কোনো ধর্মের নয়, যারা দেশকে ভালোবাসবে, তাদের। এই নীতির ওপরেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমাদের সভা-সেমিনার করতে হচ্ছে।’ 

বিশিষ্ট আইনজীবী ও সম্প্রীতি বিশেষজ্ঞ ড. ফারজানা মাহবুব বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নারীর অধিকার না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে না পারলে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত