নারী শান্তি-নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩: ৩৩

নারী শান্তি-নিরাপত্তায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলেছেন, বাজেট বরাদ্দসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা জরুরি। 

আজ শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে নারীদের নেটওয়ার্কস এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। 

আলোচনা সভায় সভাপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর। প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউএন উইং) মো. এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএন ওমেন এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ নবনীতা সিনহা। 

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—ইউএন ওমেন এর প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং এনালিস্ট তানিয়া শারমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাদের শেখ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ওসমান ভূঁইয়া। 

রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশের নারীরা বেশি বৈষম্যের শিকার। বর্তমান সময়ের নির্বাচনী সহিংসতায় নারী ও শিশুদের আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। এ দেশের নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮৭ শতাংশ নারী গৃহে নির্যাতনের শিকার, এ ক্ষেত্রে ধর্মও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া জেন্ডার বাজেট সারা বিশ্বে ১ শতাংশের নিচে। এমনকি জাতিসংঘের বরাদ্দে ইউএস ওমেনের বরাদ্দ সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের জেন্ডার বাজেট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে হবে এবং এই বরাদ্দ নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে হবে। 

নবনীতা সিংহ বলেন, ‘বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে একটি নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিভিল সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মৌলবাদ মোকাবিলা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রতিরোধ এই বিষয়গুলোর ওপর আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন-প্রতিরোধও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ 

এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার নারী শান্তি ও নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মসূচিসমূহ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আওতাভুক্ত হবে অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আওতা নির্ধারিত হবে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বাজেটেও আওতাভুক্ত হওয়ার কথা। 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাদের শেখ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৭৩ হাজার গণশিক্ষা কেন্দ্র আছে, যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী কাজ করছে। এছাড়া প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজারের মতো মসজিদ আছে, এ সকল মসজিদের ইমামদের নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী খুতবা করতে নির্দেশনা দেওয়া আছে ও সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয় এমন কোনো ওয়াজ মাহফিলের অভিযোগ পেলে সেই ওয়াজ বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা—স্থানীয় সরকারের স্থায়ী কমিটিকে কার্যকরী করা, স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সচেতন করা ও নারী শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কার্যকরী ব্যবহার করা, পার্বত্য এলাকার স্থানীয় সরকার কাঠামোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, তরুণ ও শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা, নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোসহ ব্যাপকভিত্তিক প্রচার প্রচারণা চালানোকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত