১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে শুধু নিউমার্কেটেই ক্ষতি ২০ কোটি টাকা

মোস্তফা ইউসুফ ও সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২: ২০
Thumbnail image

শুক্রবার সকালে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে কোমরপানিতে ডুবে যায় ঢাকা নিউমার্কেট এলাকা। সেই পানি জমে থাকে পরদিন শনিবার বিকেল পর্যন্ত। এতে ভিজে যায় নিচতলার বিভিন্ন দোকানের কাপড়, বই, ব্যাগ, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ সব ধরনের মালপত্র। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে তাঁদের অন্তত ২০ কোটি টাকার মালপত্র নষ্ট হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুরে গিয়ে জলাবদ্ধতায় ক্ষতির চিহ্ন চোখে পড়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর মার্কেটের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সামগ্রী। অনেক ব্যবসায়ীকে ভেজা মালপত্র রোদে শুকাতে দেখা গেছে।

ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের ম্যানেজার মোহাম্মদ ফিরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মার্কেটটিতে ৫০৯টি দোকান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিচতলার ৪৮০টি দোকান পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির হিসাব করলে মার্কেটটিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার মালপত্র নষ্ট হয়েছে।’

শুধু নিউমার্কেট নয়, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ডুবেছে ঢাকার অধিকাংশ এলাকার সড়ক। ওই দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিতেই নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মধুবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, তালতলাসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও ছিল প্রায় কোমরসমান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকার ড্রেনেজ-ব্যবস্থা বিকল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। ড্রেনেজ-ব্যবস্থা ধ্বংসে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অনেক প্রকল্প নিলেও অনেকাংশে তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন জলাবদ্ধতা হলেই কেবল আলোচনা হয়, এ ছাড়া সারা বছর সবাই চুপচাপ থাকে।

মেট্রোরেল ড্রেনেজ সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে জানিয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেট্রোরেলসহ কিছু মেগা প্রকল্পের কারণে ঢাকার ড্রেনেজ-ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের নাম দিয়ে জলাধার, জলাশয়গুলো ধ্বংস করবেন, ড্রেনেজ লাইনের ক্ষতি করবেন, অন্যদিকে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন না, তাহলে সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে?

বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হবে—এই বাস্তবতা স্বীকার করার পরামর্শ দিয়ে আদিল মুহাম্মদ বলেন, মিথ্যা আশ্বাস না দিয়ে জলাবদ্ধতার প্রকোপ কীভাবে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেছেন, মেট্রোরেল ধরে যে লাইন, সেখানকার ড্রেনেজগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

সেগুলো সংযুক্ত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিষ্কার চ্যানেলের দরকার হয়। আশপাশের খাল, নালা ও ড্রেনেজ চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে হবে সিটি করপোরেশনকে। তাহলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

বর্ষাকালে এমন বৃষ্টি স্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্ষাকালে এ রকম বৃষ্টি মাঝে মাঝে হয়। এটা মাত্র ১৩১ মিলিমিটারের বৃষ্টি। ঢাকায় ২০০৯ সালে ৩৩৩ মিলিমিটার আর ২০০৪-এ ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আগে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত চার বছরে ব্যয় করেছে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও (২০২৩-২৪) দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত