প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করছে তৃণমূলের নারী নেতৃত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ৪৭

তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আছে সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা। এরপরেও বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, পারিবারিক নির্যাতন এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যসহ নানা রকম বঞ্চনার শিকার যারা হচ্ছেন তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব। তৃণমূলের নারী নেত্রীরা মনে করে, এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে সহযোগিতা পেলে তারাও এগিয়ে যেতে পারে। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক। 

আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ ও অপরাজিতাদের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সহ আহ্বায়ক ও খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ ও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের হেড অফ কোঅপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাবিনা ইয়াসমিন লুবনা, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন মনি, জাতীয় অপরাজিত নেটওয়ার্কের সদস্য অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার পিয়া, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ঝালকাঠি সদরের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় নেটওয়ার্ক বরিশালের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান সোনালী, সিলেটের মিনা বেগম, খুলনার বন্দনা রায়, পিরোজপুরের ফাহমিদা বেগম মুন্নি, রাজশাহীর রেহানা খাতুন, দিনাজপুরের জেসমিন পারভীন রিভা প্রমূখ। 

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সীতাকুণ্ডের ইউপি সদস্য নার্গিস বিনতে ইসলাম। প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বহুমাত্রিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ৬ হাজার ৮২১ জন নারী। এদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার শিকার ৩৪২৮ জন নারী, হত্যা করা হয়েছে ৭৫ জনকে, ধর্ষণের শিকার ৯৯ জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ১৯১ জন, নির্যাতনের শিকার ৭২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার ৩৯২ জন, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ৪৮২ জন নারীর। জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে নির্যাতনের শিকার ৫৪২ জন, একাধিক বিয়ে হয়েছে ১৩১ জন নারীর, বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৪৮২ জন কন্যাশিশু। ৮ জন নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার। এছাড়া বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫১২ জন নারী। গত ৫ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্যরা। 

নার্গিস বিনতে ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে, নিজ এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ের একজন নারী নেত্রী হিসেবে, এটা আমি অনুভব করি যে, নারীর প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আকারে বিদ্যমান সহিংসতার অবসান না ঘটলে, নারীদের যথাযথ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা নারী নেতৃত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। একই সঙ্গে নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য দরকার নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। 

অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘এই দেশের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সাম্য মানে সমান নয়, তার অধিকারপ্রাপ্তি এবং তার সব মানবাধিকার নিশ্চিত করা। এ রকম সমাজ আমরা চাই। সংবিধানেই কিন্তু এটা বলা আছে। অতএব এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে। কিন্তু আমরা অনেক কিছু এখনো অর্জন করতে পারি নাই।’ 

সভাপতির বক্তব্যে রোখসানা খন্দকার বলেন, ‘যদিও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। তারপরও নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী নির্যাতন পক্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আপনাদের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, এখনো আমাদের অনেক করার বাকি আছে।’ 

কোরিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, নারী নির্যাতন পক্ষ শুধু এই ১৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সারা বছরই অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্যরা নির্যাতিত নারীর পাশে থাকবেন। তিনি ২০২৩ সালে এসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এখনো এত নারী সহিংসতার শিকার হয়, এটা দুঃখজনক। 

নিলুফার ইয়াসমিন মনি বলেন, কোনো নারীই আলাদা নয়। সবাই এক। কারও কারওর যুদ্ধটা হয়তো একটু কম। কিন্তু দু-একজনের অবস্থা দিয়ে সবাইকে বিবেচনা করলে চলবে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের এখানে এসেছেন, এটা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের বড় অর্জন। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা অংশগ্রহণ করতে চাইলে, কিংবা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন জমা দিলেই নারী প্রার্থীর চরিত্রহনন করে। নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা। 

দেশের ছয়টি বিভাগের মোট ৯ হাজার অপরাজিতা নিজ নিজ এলাকায় নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায় ও নির্যাতনের নানান ঘটনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত