গাজীপুরে তৃতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের, যানজট ছড়িয়েছে অলিগলিতে

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৮
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ০৬
তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা। প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে চলা এ অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে । এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারীরা যাত্রীরা। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ চালক, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ। পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি, বকেয়া পাওনা না পেলে তারা রাস্তা ছাড়বেন না। এ ছাড়া মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় অপর একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণ একটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।

গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা গত শনিবার সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে। আজ সোমবার সকাল দশটায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলনে শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকেরা ভাগ করে অবস্থান করছে। দুই থেকে আড়াই শ শ্রমিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতাও।  এদিকে টিঅ্যান্ডজেড এর শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের ১৫-২০টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধে বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাচ্চা কোলে নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিলেন কলিম উদ্দিন। কোথায় যান জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আজ তিন দিন ধরে বন্ধ। অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। দূরপাল্লার গাড়ি চলছে না।

টানা শ্রমিক অবরোধের ফলে কার্যত অচল হয়ে গেছে গাজীপুর। মহাসড়কের যানজট রাতে বিভিন্ন বিকল্প পথে চলাচল শুরু করায় যানজট এখন অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মহাসড়কের যানজট আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। অবরোধের বিষয়টি জানার পর অধিকাংশ যাত্রী ও যানবাহন এ সড়ক এড়িয়ে চলছেন।

মহাসড়ক অবরোধ থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মহাসড়ক অবরোধ থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরীর মালিকের বাড়ি এলাকায় কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে ২০০ মিটার ব্যবধানে দুটি ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল আটকে দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে কয়েক শ শ্রমিক এবং কিছু যুবককে লাঠি হাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তারা কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে বেতন ছাড়া আর কোনো কথা বলার ব্যাপারে আপত্তি জানায়।

আন্দোলনকারী এক যুবক এগিয়ে এসে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করেছি কাজ করেছি আমাদের টাকা দিচ্ছে না।  আমরা আমাদের পাওনা চাচ্ছি। আমাদের পাওনা দিয়ে দেন আমরা বাড়ি চলে যাব।’

এ সময় এখানে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এবং গাজীপুর মহানগর পুলিশের ওপর পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদকে কথা বলতেও বাধা দিতে দেখা যায় তাদের। শ্রমিকদের দাবি যা বলার মাইকে বলেন।

ময়মনসিংহ থেকে চাঁদপুরগামী হায়দার নামে এক ট্রাকচালক বলেন, দু’দিন ধরে সড়কে রয়েছি। কোথাও যেতে পারছি, নড়তেও পারছি না। অনেক ট্রাকে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস থেকে যাত্রীরা নেমে গেছে দুদিন আগে। কিন্তু বাস আগের স্থানেই রয়েছে। খুব বিরক্ত হয়ে গেছি ভাই।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর আবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তাঁরা ফিরে যান। কিন্তু শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না। তা ছাড়া কারখানা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এসব কারণে শনিবার সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। বারবার সময় দেওয়ার পরও বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিকেরা এখন আর কারও কথা আর বিশ্বাস করে না।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরাও বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরাও বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রমিক নেতা আরমান হোসাইন বলেন, আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। তারা বলেছেন দুই মাস ধৈর্য ধরেছি ,আর না। আমাদের কথা হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ রাখায় যে ভোগান্তি হচ্ছে এটি দ্রুত সমাধান করা। আশুলিয়া আর গাজীপুর মিলে ৮-১০ টা কারখানায় মূলত ঝামেলা দেখছি। তাদের পাওনাও খুব বেশি না। প্রয়োজনে ওই সব মালিকদের কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও পাওনা পরিশোধ করুক। আজ আমরা আবারও শ্রমিকদের সঙ্গে বসব।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কথাই শুনে না। তারা বেতন না নিয়ে মহাসড়ক ছাড়বে না। তাঁদের আজও বোঝানো হচ্ছে। যেহেতু দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে, এ জন্য আপাতত বিকল্প যে রাস্তা রয়েছে তা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য। মালিকপক্ষ একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা রক্ষা করতে পারেনি। তাই শ্রমিকেরা গত দুটি রাত রাস্তায় বসে আছে।

তিনি আরও বলেন আমি যতদূর জানি মালিকপক্ষও টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এ সময় তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি তোমরা পারো মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে রাস্তা ছেড়ে দাও। এ সময় উপস্থিত শ্রমিকেরা বলেন, আমাদের টাকা না দিলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না।

এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রেখেছে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।

সোমবার সকাল ৮ টা থেকে মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা পল্লী বিদ্যুৎ দশতলা আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পুলিশ জানায়, গত অক্টোবর মাসের বেতন এ মাসের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১০ তারিখে বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। গতকাল দুপুরে পর তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। আজ সকাল ৮টায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে পোশাক শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন ১৪ নভেম্বরের আগে  বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শ্রমিকেরা কেউ এ কথা শুনছেন না।

শ্রমিকেরা বলেন, প্রতি মাসের দশ তারিখে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বেতনের সময় টালবাহানা শুরু করে। তারা বলেন, বেতন না দিলে আমরা কাজে যোগ দেব না।

এ বিষয়ে  জানতে স্বাধীন গার্মেন্টসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজু আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে বাইমাইলে কাশেম ল্যাম্পস কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ দশ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত