পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মাদকের রমরমা কারবার

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪১
Thumbnail image

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। পুলিশের তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট), টহল ও অভিযান না থাকায় সারা দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। এই সুযোগে মাদকের কয়েকটি বড় চালান বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকেছে। মাদক পাচারের নতুন রুটেরও খোঁজ মিলেছে।

সম্প্রতি একটি সংস্থার গোয়েন্দা শাখার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ শুধু মাদক কারবারিরাই নিচ্ছে না, মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা দু-একজন অসাধু কর্মকর্তাও জড়িয়ে গেছেন মাদক পাচারে। এসব রোধে দ্রুত মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাদক নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় করতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিক্ষুব্ধ মানুষ সারা দেশে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আত্মগোপন করেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। ভেঙে পড়ে পুলিশি ব্যবস্থা। সড়কে পুলিশ দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় মাদক কারবারিরা। সীমান্ত পেরিয়ে আসা মাদক বিনা বাধায় নিয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তৎপরতায় কিছু মাদক ধরা পড়েছে। 
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার এবং এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, মিয়ানমার থেকে পাঁচ ব্যক্তি নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাং এলাকায় মাদকের চালান নিয়ে লবণ মাঠের দিকে যাচ্ছিল। ধাওয়া করে তাদের একজনকে আটক করা হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। তাদের ফেলা যাওয়া একটি ব্যাগ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ১৭ আগস্ট কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের রামু-মরিচ্যা বিজিবি চেকপোস্টে বাসে তল্লাশি করে টেকনাফের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিদর্শক মো. আমজাদ হোসাইনকে ৭০ হাজার ইয়াবা বড়িসহ আটক করে।

বিজিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাদক কারবারিরা চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে গত এক মাসে মাদকের একাধিক বড় চালান দেশে ঢুকিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মাসে যেখানে সারা দেশে অন্তত ৫-৭ হাজার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়, সেখানে গত মাসে (আগস্ট) মামলা হয়েছে মাত্র ১৫টি। অর্থাৎ মাদকবিরোধী কোনো অভিযান গত মাসে হয়নি।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের গোয়েন্দা উপপরিচালক মো. জিললুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার পতনের কোনো প্রভাব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ওপর সরাসরি পড়েনি। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে সক্রিয় থাকলেও অভিযানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। শুরু থেকে অস্ত্র ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন অধিদপ্তরের সদস্যরা। অভিযান চালাতে গিয়ে নিরাপত্তাজনিত কোনো ঝামেলা হলে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হতো। কিন্তু পুলিশিং কার্যক্রম না থাকায় সেই সুযোগ ছিল না।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশের থানাগুলো সচল হয়েছে। সব ইউনিট কাজ করছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

এদিকে চলমান পরিস্থিতির সুযোগে মাদক পাচারের নতুন রুট করেছে মাদক কারবারিরা। ৮ সেপ্টেম্বর বিজিবির সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা বিওপির টহলদল ভারত সীমান্তবর্তী কেড়াগাছি থেকে এক কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, সাতক্ষীরা সীমান্তে আইস ধরা পড়া উদ্বেগজনক। কারণ, এই মাদকের রুট হিসেবে চিহ্নিত ছিল টেকনাফ।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, শুধু এই পরিস্থিতির জন্য নয়, মাদক প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যেভাবেই হোক বিদেশ থেকে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে। না হলে অনেক তরুণ বিপথগামী হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত