নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ দেশের ভেতরেই আছেন। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তবে কোথায় আছেন, সেটা নিশ্চিত করতে র‍্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নতুন জঙ্গি দলের তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয় সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন। 

নতুন জঙ্গি দলের সদস্যরা তাদের আমিরের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তাহলে আমিরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, আমিরের নির্দেশেই তাঁরা সব করছেন। আমরা আমিরের অবস্থান জানতে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। যতটুকু তথ্য আছে তাদের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ দেশের অভ্যন্তরেই আছেন। তবে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তাকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।’ 

র‍্যাব বলছে, সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফের প্রধান নাথান বমের সুসম্পর্ক ছিল। নাথান বমের সঙ্গে তাঁদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়। এরপর তাঁরা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন। বিভিন্ন সময়ে কেএনএফের প্রধান নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল ও কাকুলিসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসতেন। 

কী পরিমাণ সদস্য এই দলে আছে—এমন প্রশ্নে র‍্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ৫৫ জনের নাম দিয়েছি। আমাদের ধারণা, এখন পর্যন্ত তাদের সদস্যসংখ্যা শতাধিক। অনেক ক্ষেত্রে সদস্যসংখ্যা বলা কঠিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন; তবে সদস্যসংখ্যা সঠিকভাবে বলা যায় না। অনেকে গোপনে সদস্য হয়ে আছেন, কিন্তু অভিযানের কারণে চুপচাপ রয়েছেন। জঙ্গি রাকিব, মাঈনুলের মাধ্যমে একটা দল সদস্য হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এ ধরনের চেইন আছে।’ 

জঙ্গি দলটির কাছে অস্ত্র আছে। সামনে নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে নতুন জঙ্গি দলকে রাজনৈতিক দল কাজে লাগাতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দেশের মানুষ কখনো জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। সাধারণ মানুষের সহায়তা ছিল বলেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র‍্যাব অনেকটা সফল। কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের ফায়দা নেওয়ার জন্য জঙ্গিদের কাজে লাগায়, এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের জনগণ তাদের মেনে নেবে না। নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমাদের গোয়েন্দারা নজরদারিতে রেখেছেন। তথ্য পেলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত তথ্য নেই, কোনো রাজনৈতিক দল তাদের ব্যবহার করবে।’ 

নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কি না—এমন প্রশ্নে মঈন বলেন, ‘জঙ্গিদের মুভমেন্ট বা কোনো কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়ামাত্র আমরা সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনছি। নির্বাচন ঘিরে কোনো তৎপরতা আছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।’ 

মঈন বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গি দলের কাছে দেশ-বিদেশ থেকে টাকা আসছে। এ ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব তথ্য পাঠানো হয়, তা-ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়।’ 

অস্ত্র-টাকাসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্য তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের দিকে যাচ্ছিলেন। সোমবার রাতে সিএনজি অটোরিকশায় করে যাওয়ার পথে রাজেন্দ্রপুরে র‍্যাবের চেকপোস্টে তল্লাশির সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়। 

লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিবসহ তিন সদস্যকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অর্থসহ গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। 

র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৭-এর আভিযানিক দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিব, জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার সিফাত ওরফে মামিদকে গ্রেপ্তার করে। অভিযান চলাকালীন সময় কিছু সদস্য পালিয়ে যান। 

কমান্ডার মঈন বলেন, পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তাঁরা চলে এসেছেন। এসব সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধের জন্য সংগঠিত হচ্ছিলেন।