শিক্ষক আসিফ মাহতাব-কাণ্ড: পক্ষে জামায়াত ও হেফাজত, বিপক্ষে মহিলা পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ০৪
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ১৬

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ অভিশপ্ত ও ইমানবিধ্বংসী মতবাদ আখ্যা দিয়ে ওই শিক্ষককে স্বপদে বহাল করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। 

অন্যদিকে আসিফ মাহতাবের বক্তব্য এবং পরে তাঁর পক্ষে আন্দোলনের মাধ্যমে একধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপপ্রয়াসের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। 

আজ বুধবার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে এই তিনটি সংগঠন। 

জামায়াতের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী একদলীয় সরকার নৈতিকতা ও আদর্শবর্জিত কারিকুলাম চাপিয়ে দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের চরিত্র ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯২ শতাংশ মুসলমান এই পাঠ্যক্রম প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আসিফ মাহতাব একজন সত্যিকারের আদর্শবাদী শিক্ষকের মতো কাজ করেছেন। তাঁকে বরখাস্ত করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূলত এমন একটি শিক্ষা কারিকুলামের পক্ষ নিয়েছে। আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

গণমাধ্যমে পাঠানো হেফাজতে ইসলামের বিবৃতিতে জানানো হয়, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০২৩ (খসড়া) প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলতেই পারেন। সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে অব্যাহতি দিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে স্বপদে বহাল করার দাবি জানাচ্ছি। 

এদিকে আসিফ মাহতাবের বক্তব্য এবং পরে তাঁর পক্ষে আন্দোলনের মাধ্যমে একধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপপ্রয়াসের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক জাতীয় পাঠ্যবইয়ের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীবিষয়ক অধ্যায়ে শরীফার গল্প থাকা দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার আহ্বান জানান এবং নিজেও এই পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলেন। এই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ট্রান্সজেন্ডার আখ্যায়িত করে শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। 

জানা গেছে, ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তখন তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। 

বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা এবং ওই দিনের অনুষ্ঠানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব দাবি করেন, এ ঘটনার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ বলেছে, আসিফ মাহতাব ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডজান্ট ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তির আওতায় নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত