Ajker Patrika

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে থানায় পুলিশ, এখনই মিলবে না সব সেবা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০: ৪৩
ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে থানায় পুলিশ, এখনই মিলবে না সব সেবা

পলাশ সরকার। পেশায় শিক্ষক। পুলিশের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে মোহাম্মদপুর থানায় আসেন। তবে ডিউটি অফিসার তাঁর অভিযোগটি রাখেননি। তাঁকে আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দেন। ডিউটি অফিসার ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমরা কেবল জরুরি অভিযোগগুলো রাখছি। যেমন, হত্যা, চুরি ও ডাকাতি। এ ছাড়া কোনো সেবা এখন দেওয়া সম্ভব না।’ ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে আইনি সহায়তা না পেয়ে হতাশ হয়ে বের হয়ে যান পলাশ সরকার। 

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওই দিন বিকেলেই দেশের থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গণবিক্ষোভের মুখে থানা রেখে নিরাপদে চলে যায় পুলিশ। আগুন ও ভাঙচুরে দেশের ৪৫০ থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি অপরাধ বিভাগের ৫০ থানার মধ্যে অক্ষত ছিল মাত্র সাতটি থানা। বাকিগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আগুনে পুড়ে যায় তদন্তাধীন মামলার ও অন্যান্য নথি এবং অবকাঠামো। লুট হয় জরুরি সরঞ্জাম। মোহাম্মদপুর থানা এর মধ্যে অন্যতম। 

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান ফটকের সামনে ছয়জন সেনা সদস্যের পাহারা। তাঁদের অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে থানা কম্পাউন্ডে পুড়ে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া পুলিশের চারটি ভ্যান, নয়টি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। থানার ভবনে ঢুকতেই কালো ছাই আর পোড়া কাগজ, স্যাঁতসেঁতে মেঝে। নিচতলায় ওসির কক্ষে একজন ডিউটি অফিসার টেবিল পেতে সিভিল পোশাকে বসে আছেন। চারজন যুবক তাঁর টেবিল ঘিরে দাঁড়ানো। কক্ষের ভেতরে টেবিল চেয়ার, হাজিরা খাতা, রেজিস্ট্রার খাতা সবই নতুন। যুবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তিনি। এই যুবকদের একটি মোটরসাইকেল সংক্রান্ত সমস্যার কথা শুনছিলেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা শেষ করে, এক নারীর হারিয়ে যাওয়া মোবাইলের বিষয়ে জিডির পরামর্শ দেন ডিউটি অফিসার। এই ফাঁকে জানা যায়, ডিউটি অফিসারের নাম উপপরিদর্শক (এসআই) মধুসূদন মজুমদার। 

ভাঙচুর অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত থানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কেবল আজ জরুরি বিষয়ের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিচ্ছি। আজকে সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৩টি জিডি হয়েছে।’ 

মোহাম্মদপুর থানায় অগ্নিসংযোগ করায়, এই থানার কোনো কিছু অবশিষ্ট ছিল না। ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে বের হয়ে পাশের কক্ষে দেখা যায়, এক দল শিক্ষার্থী দেয়ালে চুনকাম করছেন। তাঁরাই তিন দিন ধরে থানাটি সাফছুতরোর কাজ করে দিচ্ছেন। এখন আরেকটি কক্ষ ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। এভাবে তাঁরা পুরো থানা পরিষ্কার করে দেবেন বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম নাঈম। তিনি বলেন, ‘আমরা থানাটাকে ব্যবহার উপযোগী করে দিতে কাজ করছি। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে।’ 

তেজগাঁও বিভাগের আদাবর থানাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, তাঁর বিভাগের ছয়টি থানাই চালু করা হয়েছে। 

এদিকে রমনা বিভাগের সবগুলো থানায় কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এই বিভাগের নিউমার্কেট, রমনা ও শাহবাগে হামলা হয়েছিল। তবে থানা ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। কলাবাগান থানায় গিয়ে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর পাহারায় দোতলায় ডিউটি অফিসার বসে সেবাপ্রার্থীদের সেবা দিচ্ছেন। সীমা নামে এক তরুণী মেইলে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে জিডি করতে এসেছেন। তাঁকে পরামর্শ দেন ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুল্লাহ আল সাদিক। 

এসআই বলেন, ‘আমাদের সব সেবা চালু আছে। থানার সবাই উপস্থিতও আছে। বর্তমানে কেবল জিডি নেওয়া হচ্ছে। তবে টহল কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময় লাগবে। গাড়ি ও ওয়ারলেস সেট চালু হলে টহল চালু হবে।’ 

অপরদিকে, ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী থানা সম্পূর্ণ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও সেখানে অবশিষ্ট কিছু নেই। সোমবার কয়েকজন পুলিশ সিভিলে সেখানে যান। তবে কার্যক্রম শুরু হয়নি। সেবা বন্ধ। দুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা সেবাপ্রার্থীদের বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ রাখলেও তা আনুষ্ঠানিক কিছু না। সাদা পোশাকে শ্যামপুর, ওয়ারী, ডেমরা ও কদমতলী থানার পুলিশ থানায় আসে। 

কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি গুলশান বিভাগের ভাটারা থানা। এই থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এই থানার কর্মকর্তাদের গুলশান থানায় ও উপকমিশনারের কার্যালয়ে হাজিরার জন্য বলা হয়েছে। বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজান সাহা বলেন, ভাটারায় কাজ শুরু করার জন্য থানা প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

আপাতত জরুরি জিডি ছাড়া কোনো অভিযোগ নিচ্ছে না পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকাএই বিভাগের বাড্ডা থানায় লুটপাট করেছিল দুর্বৃত্তরা। সোমবার সরেজমিনে থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার প্রধান ফটক ভাঙা। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বাইরে থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে একটি নতুন কম্পিউটার, টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেছেন এসআই শাকিল আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জিডি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্ভার না থাকায় ইনপুট দেওয়া যাচ্ছে না।’ শাহীনা নামে এক নারী তাঁর ভাই নিখোঁজের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে, ডিউটি অফিসার সেটি রেখে তাঁকে পরে হালনাগাদ জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন। 

ডিএমপি জানিয়েছে, থানাগুলোতে ইন্টারনেট সেবা, ওয়্যারলেস, গাড়ির ব্যবস্থা করা, অস্ত্রের ব্যবস্থাপনার পর টহল কার্যক্রম, পরোয়ানা তামিল, মামলার তদন্ত শুরু হবে। এতে আরও দু–একদিন সময় লাগবে। 

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে দেশের ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত