রাজধানীতে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ বন্ধু নিহত

উত্তরা (ঢাকা) ও ঢামেক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩: ১৯
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১: ২৯

রাজধানীর দক্ষিণখানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। তারা হলো– রবিউল হাসান (১৬), জোনায়েদ আহমেদ (১৬) ও ওমর ফারুক (১৭)।

দক্ষিণখানে আশিয়ান সিটির পয়সা বাজার সংলগ্ন সড়কে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা দক্ষিণখান আশকোনার ’মা  হাদুস সুন্না’ নামের একটি মাদ্রাসার হেদায়েতুন্নাহু শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

রবিউল হাসান বরিশালের বাউফল উপজেলার বরিপাশা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। উত্তরখানের বালুরমাঠ এলাকায় ছোট বোন ও বাবা–মায়ের সঙ্গে থাকত। জোনায়েদ আহমেদ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরের শফিকুল ইসলামের ছেলে। ওমর ফারুক নারায়গঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী পৌর এলাকার মো. রাজনের ছেলে।

থানা পুলিশ ও নিহতদের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, ওই তিন ছাত্র বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। হঠাৎ করে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা সামনে এসে পড়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে মোটরসাইকেলটি উল্টে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় রবিউল হাসান ও জোনায়েদ আহমেদকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ওমর ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা প্রথমে রবিউলকে এবং পরে জোনায়েদ ও ওমর ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।

সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রবিউলের মা কাজল রেখা, ছোট বোন রুমানা আক্তার রাবেয়াসহ স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখান থেকে তাদের দক্ষিণখান থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে থানা এলাকা।

রবিউলের ছোট বোন রুমানা আক্তার রাবেয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাই এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে। আজ কীভাবে কী হয়ে গেল কিছুই বলতে পারছি না!’ 

রবিউলের মা কাজল রেখা কান্নাভেজা কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই হোন্ডাওয়ালা আমার পোলাডারে মাইরা লাইছে। ওই পোলার লগে চইলা আমার পোলাডার দুর্ঘটনা হইছে। আজ আমি সন্তানের মুখও দেখতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘পোলাপান আমার কাছে যে ছামান চাইছে, আমি কিছুই দেই নাই। বলছি, পরীক্ষা দাও, সব কিছুই দিব। কিন্তু কিছুই দিতে পারলাম না।’

মাহাদী হাসান নামে এক আত্মীয় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওরা সবাই মাহাদুস সুন্না মাদ্রাসার হেদায়েতুন্নাহু বিভাগের ছাত্র। ওমর ফারুক তার বাবার হাঙ্ক মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। সাথে বরিউল ও জোনায়েদ যায়। পরে খবর আসে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনই মারা গেছে।’

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ’ওই ছাত্রদের মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিল হচ্ছিল। ওমর ফারুকের বাবা মাদ্রাসায় আসার পর তার ছেলে মোটর সাইকেলের চাবি নিয়ে চলে যায়। সঙ্গে আরো দুই ছাত্র যায়। পরে দুর্ঘটনায় তিনজনই মারা যায়।’

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাবো হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ওমর ফারুক নামে এক যুবককে স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। 

হাসপাতালে ওমর ফারুকের বাবা মো. রাজন বলেন, তাঁদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গন্ধপপুর গ্রামে। ওমর ফারুক মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করত। রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে মারা যান। 

দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আনুমানিক রাত পৌনে ৮টার দিকে দক্ষিণখানে আশকোনা এলাকায় একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে একজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। একজন কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যায় এবং একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত