যমুনার পানি বেড়ে ভূঞাপুরের চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
Thumbnail image

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বিগত বছর ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের শঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। 

গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ, নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক মাসুদ। তারা দুই একদিনের মধ্যেই জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের। 

গত বছর বন্যায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা গাইড বাঁধের জিও ব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধা পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, ছোট বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শুকনো মৌসুমে বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীতে জেগে ওঠা চর কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। 

যমুনা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত পাটিতাপাড়া বাহাদুর টুকনা এলাকার আবু সুফিয়ান ও জালাল প্রামাণিক বলেন, যমুনা নদী তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে তাঁদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। থাকার জায়গা টুকুও ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ না করলে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। সরকারের কাছে দাবি-দুই একদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার। না হলে এলাকায় যে কয়টি বাড়ি আছে সব নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। 

পাটিতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজেদা বেগম ও নাজমা বেগম জানান, গত কয়েক দিন ধরে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে ঘরবাড়ি। গত বছর বসতভিটা ভেঙে যেটুকু থাকার জায়গা ছিল সেটি এবারও চোখের সামনে নদী গর্ভে বিলীনের পথে। এখন ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিঃস্ব হয়ে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। তাই ভাঙন রোধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। 

এ বিষয়ে নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, ‘গত দুদিন ধরে মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানাই। তাঁরা এসে পরিদর্শন করেছেন। অতি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে ভাঙন শুরু করেছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙন কবলিত এলাকার একটি স্থানে ভাঙন জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। অন্যান্য ভাঙন কবলিত স্থানেও ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত