‘ফুলটাইম’ ছাত্রলীগের রাজনীতি, ‘পার্টটাইমে’ ছিনতাই 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ২০: ১১
আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ২০: ৩৬

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ১২ নম্বর সহসভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষ। সোনারগাঁয়ের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই নেতা রাজনীতির পাশাপাশি হাল ধরেছেন ছিনতাইকারী দলের। হাতে ওয়াকিটকি ও পুলিশি বেশভূষা ধারণ করে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই করেন তিনি। সম্প্রতি এক প্রবাসীর ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে গ্রেপ্তার হন তপুসহ চারজন।

গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তপুসহ তাঁর সহযোগীরা। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বন্দর ফাঁড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম।

তপু চন্দ্র ঘোষ সোনারগাঁয়ের অর্জুনাদি গ্রামের সাধন চন্দ্র ঘোষের ছেলে। তাঁর বাবা পেশায় মিষ্টান্ন বিক্রেতা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসলেও পাঁচ মাস আগে একটি ছিনতাইকারী দল পরিচালনা শুরু করেন। ইতিমধ্যে অন্তত পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল সৌদিপ্রবাসী উজ্জ্বল হোসেন স্বর্ণ বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বন্দরের হাজি বাড়ি মোড় এলাকায় পৌঁছালে তাঁর থেকে ১৭ লাখ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল দুর্বৃত্ত। এই ঘটনার পর ৬ এপ্রিল বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। ১৩ এপ্রিল পুলিশ তপুসহ তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন সোনারগাঁয়ের অর্জুনাদি গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে রোহান (২২), বড়নগর এলাকার শুভঙ্কর চন্দ্র রাজবংশীর ছেলে কৃষ্ণচন্দ্র রাজবংশী (৩২) ও বগুড়ার শেরপুরের খাজা আশ্রমপাড়া এলাকার চান মিয়ার ছেলে এরশাদ (২৪)। আসামিদের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র একজন স্বর্ণের দোকানের কর্মী। বাকি দুজন তপুর সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বন্দর ফাঁড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে তপু একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার মীমাংসা করে দেন। সেখান থেকে তাঁর মাথায় পরিকল্পনা জাগে যে নিজেই ছিনতাইকারী দল গঠন করবেন। এ ক্ষেত্রে কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে জানান, যেসব লোকজন স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে যাবেন, তাঁদের টার্গেট করে দেবেন তিনি। এরপর মাঝপথে ডিবি পরিচয়ে স্বর্ণ বিক্রির নগদ টাকা ছিনিয়ে নিতেন তাঁরা। গত পাঁচ মাসে তাঁরা প্রায় পাঁচটি ছিনতাই করেছেন বলে স্বীকার করেছেন জবানবন্দিতে।’

পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘আসামিরা মূলত বন্দর এবং সোনারগাঁ এলাকাতেই ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই করতেন। এই চক্রের সঙ্গে আরও দুজন রয়েছেন, যাঁরা পলাতক। পুলিশ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তাঁরা হাতে একটি ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন। সেই ওয়াকিটকি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতা তপু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের অনুসারী। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তপু দুই বছর ধরে আমার কাছে ভেড়ে না। আমি একটু রাজনীতিতে ব্যাকফুটে আছি বলে আসতে চায় না। আমার সঙ্গে যত দিন ছিল, আমি তত দিন শাসনে রাখতাম। শহরে ঢোকার পর সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেছে। আগে ফুলটাইম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকত। এখন শুধু তপু নয়, ওর মতো অনেকেই শহরে গিয়ে বিগড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও বন্দরে গোলাগুলির ঘটনায় বেশ কয়েকজন সোনারগাঁয়ের ছেলেকে গ্রেপ্তার হতে দেখলাম। শহরে ঢুকে এরা কেউ আজমেরী ভাই আর কেউ অয়ন ভাইয়ের কাছে ভেড়ে। স্থানীয় মুরব্বিদের এখন আর মানে না।’

এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিব্রতবোধের কথা জানিয়ে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধানকে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ছাত্রলীগের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো কমিটির এখন মেয়াদ নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা এসব কাজ করছেন, তাঁদের আইনের হাতে সোপর্দ করা প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ একজন ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনিই কেন্দ্র থেকে এগুলোর অনুমোদন নিয়ে আসতেন। গত সিটি নির্বাচনে যখন কেন্দ্রীয় নেতারা দেখলেন ছাত্রলীগ আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তারা সিনিয়রদের কথা শোনে না, তখন তারা নতুন করে ছাত্রলীগ গঠনের কথা বলেছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত