Ajker Patrika

গরিবের কসাইখানায় ১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ মে ২০২২, ২১: ১২
গরিবের কসাইখানায় ১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস

এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়! সঙ্গে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি পোলাওয়ের চাল ও মাংসের মসলা। ঈদের দিন এমনি এক বাজারের দেখা মিলল মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায়। 

ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশন’ ‘গরিবের কসাইখানা’ নামের ব্যতিক্রমী এই ঈদ বাজারের আয়োজন করে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০টাকার বিনিময়ে নিম্ন আয়ের তিন শতাধিক পরিবার এক কেজি গরুর মাংস, এক কেজি পোলাওয়ের চাল ও মাংসের মসলা কিনে নেন। এমন আয়োজনে হাসি ফুটেছে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে। 

এর আগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজার আয়োজন করে সংগঠনটি। এ নিয়ে ১০ টাকার বাজার থেকে ৫১৩টি পরিবার বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারে।

জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের শেফালি বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে অনেকগুলো গরুর জবাই করছে। দেখে ছোট পোলায় বায়না ধরছে ঈদে গরুর মাংস খাবে। তিন দিন ধরে পোলারে বুঝাইতাছি আজ না কাল। কিন্তু গরুর মাংস তো সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি ক্যামনে আনব। ঈদের দিন পোলায় মন খারাপ করব। সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। কিন্তু আল্লাহ ছোট বাচ্চাটার মনের ইচ্ছে পূরণ করছে। তাই তো হঠাৎ করে এত কম টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম। এই দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই!’ 

কামারখাড়া এলাকার জয়মালা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কুরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস দেখি না। কুরবানি আইলে মানুষ গরুর মাংস দেয়। বছরের ওই ঈদেই শুধু গরুর মাংস খাই। রোজার ঈদে গরুর মাংস আর পোলাও চাল খাইতে পারমু তা কখনই ভাবতে পারি নাই। এর আগেও এখান থেকে ১০ টাকায় ইফতারির তেল-খেজুরসহ ৭-৮ প্রকার খাওন কিনে নিছি।’

বাজারে পাহারাদারের কাজ করেন শিলই গ্রামের মারফত আলী (৬০)। এত সস্তায় গরুর মাংস সঙ্গে পোলাওয়ের চাল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তিনি। মারফত আলী বলেন, ‘মাস শেষে পাঁচ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। ইদে যে বাজার করব দিন শেষে সেই টাকাও নাই। অভাবের সংসারে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনব এটা ভাবতেও ভয় লাগে। গতকাল বাজারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরু জবাই করা দেখলাম। মনে চায় একটু মাংস দিয়ে ভাত খাই কিন্তু সাহসে কুলায় না। রাতে যখন জানতে পারি এখানে ১০ টাকায় গরুর মাংস দিব, তখনই নিয়ত করছি যেভাবেই হোক মাংস কিনব। তাই ঈদের নামাজ পড়ে দেরি করি নাই, সাথে সাথে চলে আসছি এখানে। এখন মাংস পেয়ে ঈদের আনন্দ ডাবল হয়ে গেছে আমার!’ 

১০ টাকায় নিম্নবিত্তরা পেলেন মাংস ও পোলাওয়ের চালএই আয়োজন সম্পর্কে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘ঈদের দিন তিন শতাধিক পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এই ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি আগামীতে সবার সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারব।’ 

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল, বিত্তবানদের মতো তারা যেন ঈদের দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাঁদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এ রকম আয়োজন করতে আমাদের আরও উৎসাহ জোগায়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত