যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২১, ২০: ০৯
আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ২০: ১৪

ঢাকা: করোনা নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখা হয়েছে দুরপাল্লার বাস। কিন্তু ঘরমুখো মানুষকে কোনভাবেই রাজধানীতে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন যানবাহনে কয়েক ধাপে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা ছাড়তে নিষেধ করায় ঈদের আগ মুহূর্তে রাস্তা কড়াকড়ি হওয়ার আশংকায় আগে ভাগেই নগরবাসি গ্রামমুখী হচ্ছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস এমনকি পণ্য পরিবহনের গাড়িতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তাঁরা। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ফেরিঘাটে শুক্রবার ছিলো উপচে পরা ভীড়। মূলত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঘাটে ধীরে ধীরে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। কোনো পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। তবে গত সোমবার স্পিডবোর্ট দুর্ঘটনার পর মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শিবচরের কাঠালিয়া রুটে স্পিডবোট বন্ধে কঠোর হয়েছে প্রশাসন।

মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ এর ইনচার্জ আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘাটের সব স্পিডবোটের পাখা খুলে রাখা হয়েছে। ট্রলারগুলো একসাথে করে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।

শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের চর জানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্পিডবোট ও ট্রলার নৌ পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়েছে। অবৈধ কোনো নৌযান যেন আর না চলতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সব উইং সতর্ক রয়েছে।

গাবতলী, সায়দাবাদ ও মহাখালীর তিনটি বৃহৎ বাসস্টপেজ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়ছে। যাত্রীদের কাছ থেকেও ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

মাওয়া ঘাট দিয়ে নৌপথে দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াত করে। শুক্রবার সকালে ঘাটে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটে যানবাহন ও মানুষের জটলা বাঁধে। ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাটে যেতে গুলিস্তান, বাবুবাজার, সায়েদাবাদ ও পোস্তগোলায় একাধিক সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু ও মাইক্রোবাস স্টপেজ গড়ে উঠেছে।

করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠছে ঘরমুখো মানুষ। ছবি : সৈয়দ মাহমুদুর রহমানআজকের পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান জানান, শুক্রবার সকালে মাওয়া ফেরিঘাটে ছিলো মানুষের ঢল। নিম্ন আয়ের মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছিলো। তারা সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকা থেকে মাওয়া এসেছেন।সাধারণ মানুষের চাপে কিছু ফেরিতে গাড়িও উঠতে পারেনি। একই কথা বলেছেন মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা হায়দার আলী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর বাসা মিরপুর থেকে সকালে বাসে করে গুলিস্তান আসেন। সেখান থেকে ১১০০ টাকা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে মাওয়া ঘাটে পৌঁছান। ফেরিতে মানুষের প্রচন্ড ভীড়। গায়ে গা ঘেঁষে, কেউ মাস্ক পরে, আবার কেউ মাস্ক ছাড়াই ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা লক্ষ করা যায়নি।

ঢাকা ছাড়া মানুষের চাপ ছিলো মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটেও। জেলার ভেতরে গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ার পর শুক্রবার ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। ফেরিতে যানবাহনের চেয়ে মানুষের চাপ বেশি। গাবতলী থেকে বাস না ছাড়লেও মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে পাটুরিয়াঘাটে গেছে মানুষ। তবে এক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা বেশি। সময় ও গাড়ি ভেদে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে। তবে সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পুতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গেলে ভাড়া কিছুটা কম।

শুক্রবার ঢাকা থেকে ফরিদপুর সদরে যাওয়া ইলাজদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ইদের ছুটিতে পরিবারকে আগেই গ্রামে রেখে আসতে তিনি শুক্রবার সকালে ঢাকার গাবতলী থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সাভার পর্যন্ত যান। সেখান থেকে অপর অটোরিকশায় যান ধামরাই পর্যন্ত। ধামরাই থেকে তিনি টেম্পুতে করে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে ফরিদপুর সদরের মমিনখার হাটের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। পরিবার নিয়ে গ্রামে গেলেও শনিবার ভোরে তিনি একাই আবার ঢাকায় ফিরবেন। পরিবার আগেই গ্রামে রেখে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ঈদের আগে রাস্তা চলাচলে কঠোর হতে পারে। তাই আগে তিনি পরিবারের সদস্যদের গ্রামে নিয়ে গেছেন। ইদের আগের দিন পরিবার সাথে না থাকলে তিনি যেকোন ভাবেই ঢাকা থেকে গ্রামে আসতে পারবেন।

শুক্রবার দুপুরে গাবতলীতে জুয়েল নামে এক প্রাইভেটকার চালক জানান, তিনি শুক্রবার সকালে ফরিদপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা এসেছিলেন। ঢাকা থেকে ফরিদপুর ফিরছেন। গাবতলী থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে তিনি পাটুরিয়া যাচ্ছেন। স্টপেজ থেকেই তাঁকে যাত্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে তিনি পাচ্ছেন ৪৫০ টাকা করে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৬০০ টাকা করে। বাকী ১৫০ টাকা করে স্টপেজ যারা চালায় তাঁরা নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত