হাওরাঞ্চলে ঘাটে পানি ওঠায় ফেরি চলাচল বন্ধ, মানুষের ভোগান্তি

সাজন আহম্মেদ পাপন (কিশোরগঞ্জ) ও মো. ফরিদ রায়হান (অষ্টগ্রাম) 
আপডেট : ২১ জুন ২০২৩, ২০: ১৮
Thumbnail image

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ছে। ঘাটে পানি ওঠায় বিভিন্ন ফেরি চলাচল বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অনেক সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। 

কিশোরগঞ্জে হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ বছরে ছয় মাস সড়কপথে জেলা শহরে যাতায়াত করে। চলতি বছর কিছুটা বিলম্বে হাওরে পানি উঠেছে। এ কারণে ফেরিঘাট তলিয়ে যাওয়ায় আজ বুধবার সকাল থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন। 

সরেজমিন জানা গেছে, করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়কে পানি ওঠায় ও ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। ওই সড়কের বালিখলা থেকে মিঠামইন পর্যন্ত, চামড়াঘাট থেকে ইটনা পর্যন্ত দু-তিন দফা নৌকা ও অটোরিকশা পাল্টিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায় যাত্রীরা। এ সময় নারী ও শিশু যাত্রীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। 

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাওরাঞ্চলে ব্যাপক পানি বেড়েছে। তবে, এখনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। কালনী নদী (আজমিরীগঞ্জ) বিপৎসীমা ৫ দশমিক ৫ মিটার, বর্তমানে ৫ দশমিক ১ মিটার। মেঘনা নদী (ভৈরব বাজার) বিপৎসীমা ৫ দশমিক ৮০ মিটার, বর্তমানে ২ দশমিক ৩৯ মিটার। ধনু নদী (খালিয়াজুড়ি) বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১ মিটার, বর্তমানে ৪ দশমিক ৬৫ মিটার। এ ছাড়া ধনু নদীর (ইটনা অঞ্চল) বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১ মিটার, বর্তমানে রয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ মিটার। 

করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়কের বালিখলা ও কামালপুর ফেরিঘাট, করিমগঞ্জ-ইটনা সড়কের চামড়া ঘাট, বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাট সংশ্লিষ্ট ডুবো সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি ওঠায় ফেরি বন্ধ করতে হয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। 

হঠাৎ পানি বাড়ায় জেলার সঙ্গে হাওরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে মনে করেন ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ সকালে অটোরিকশায় বলদা ফেরিঘাটে এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ, গাড়ি চলে না। বাধ্য হয়ে ভেঙে ভেঙে কিশোরগঞ্জের যেতে হয়েছে।’ 

মিঠামইন উপজেলার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবার অনেক দেরিতে পানি এসেছে, হাওরবাসী বেশি দিন সড়কে যাতায়াত করেছে। আজকে মানুষ বেশ ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে। দ্রুত পানি বাড়লে নৌকা চলাচল শুরু না হওয়া পর্যন্ত কষ্ট করে চলাফেরা করতে হবে।’ 

সড়ক ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের অটোরিকশাচালক মমিন উল্লাহ্। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা চালিয়ে আমার সংসার চালাই। এখন এই পথে মানুষ কম আসবে, রুজিরোজগার কম হবে, বলা যায় বেকার থাকব। কষ্টে চলতে হবে বর্ষার সময়।’ 

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘জেলার সবগুলো ফেরিঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফেরি চালু করার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি হাওরের অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে।’ 

পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করার কথা আজকের পত্রিকাকে জানান কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। হাওরাঞ্চলে আমাদের প্রকৌশলীরা রয়েছেন, পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ রাখা আছে। ওইখানে ঠিকাদারও রয়েছেন। হাওরপাড়ের মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত