ঢাবির হলে অন্তঃসত্ত্বা ‘নিষিদ্ধ’, আপত্তি বিয়েতেও

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৬
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ২২: ১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে ওঠার সময় একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। সেই অঙ্গীকারনামার একটি ধারায় উল্লেখ আছে ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’ 

এ নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাঁচ ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তাঁরা নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কাছে। এ নিয়ে পাঁচটি হলের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। 

উপাচার্য তাঁদের বলেছেন, কিছু লোকের হঠকারী চিন্তায় কিছু করা যাবে না। হল কর্তৃপক্ষ ও ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এ নিয়মই বলবৎ থাকবে।

তবে এই নিয়ম কবে থেকে চালু হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানেন না সংশ্লিষ্টরা। 

প্রতিনিধিদলের একজন হলেন শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বিবাহিত জানলেই সিট কেটে দেয়। তবে লিখিত নিয়মে আছে, বিশেষ বিবেচনায় থাকতে পারবে। আর অন্তঃসত্ত্বা কোনো নারী হলে থাকতে পারবেন না। এটা একটি অমানবিক বিষয়। বর্তমান সময়েও এ নিয়ম থাকার কোনো মানে হয় না। এ নিয়ম পরিবর্তন দরকার। আমরা এ নিয়ম বাতিলের লক্ষ্যে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি বাইরের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছি। সেখানে এ রকম কোনো নিয়ম দেখিনি। গত কয়েক দিন আগে আমরা রোকেয়া দিবস পালন করেছি। যে জায়গায় অনেক আগে বেগম রোকেয়া নারীদের মুক্তির কথা বলেছেন, সেই জায়গায় শতবর্ষী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে এ নিয়ম থাকা কখনো উচিত মনে করি না।’ 

পাশাপাশি বিবাহিতরা হলে থাকা এবং মাতৃত্বকালীন সব ধরনের পরিচর্যার বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন ড. সাদেকা হালিম। 

আইনটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা মূল্যবোধ ও সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়মগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেখানে অনেক ভালো নিয়মও আছে। তবে বর্তমান সময়ে তা যৌক্তিক কি না, তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এ বিষয়ে আলাপ করতে হবে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে।’ 

একজন শিক্ষার্থী বিবাহিত হলে বা অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়াটা নারী অধিকার পরিপন্থি বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ‘একটা মেয়ের বিয়ে হওয়া বা অন্তঃসত্ত্বা হওয়া কোনো অপরাধ নয়। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁকে হল থেকে বের করে না দিয়ে বরং কীভাবে তাঁকে প্রয়োজনীয় সেবাযত্ন করা যায়, সেই ব্যবস্থাটা করা উচিত। মেয়েদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য একটা আনন্দের বিষয়। মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হয় বলেই তো আমাদের সমাজ-সভ্যতা টিকে আছে। কিন্তু এ কারণে যদি তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়, সেটা একটা মানবতা পরিপন্থি কাজ।’ 

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রতিনিধিরা হলে আরও কিছু নিয়মকানুন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি দাবি হলো—প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ বা ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট’ বা ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা; আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যেকোনো ধরনের হয়রানি ও অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা এবং জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত