Ajker Patrika

প্রকল্পের ভ্যাট ও কর দিতে হয় শিক্ষকদের

অরূপ রায়, সাভার 
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৬
প্রকল্পের ভ্যাট ও কর দিতে হয় শিক্ষকদের

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কতিপয় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ খরচের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভ্যাট ও আয়করের টাকা দিতে হয় শিক্ষকদের পকেট থেকে, যা তাঁরা ফেরত পান না।

বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খরচের ভাউচার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থী অনুযায়ী বিদ্যালয় পর্যায়ে তা বণ্টন করা হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর শিক্ষকদের পকেট থেকে টাকা খরচ করে বরাদ্দের সমপরিমাণ খরচের ভাউচারসহ ভ্যাট ও আয়করের চালান জমা দেওয়া হয়। এরপর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বরাদ্দের অর্থ ছাড় করা হয়।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমের (স্লিপ) আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার ৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রথম পর্যায়ে মোট বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪১ টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৯০ টাকা। আর বিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু অর্থ ছাড়ের জন্য বিদ্যালয়গুলোকে ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪১ টাকার খরচের ভাউচারের সঙ্গে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৯০ টাকার আয়কর ও ভ্যাটের চালান দিতে হয়েছে।

জানতে চাইলে উত্তর কাউন্নারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন বলেন, ‘বরাদ্দের টাকা খরচের পর ওই পরিমাণ টাকার ভাউচারসহ ভ্যাট ও আয়করের ৫ হাজার ২৮৭ টাকার চালান জমা দেওয়ার পর আমি বরাদ্দের ৩৫ হাজার ২৩৫ টাকা পেয়েছি। ভ্যাট ও আয়কর বাবদ যে টাকা খরচ করেছি, তা আমার পকেট থেকে গেছে। এভাবে বছরের পর বছর ভ্যাট ও আয়কর বাবদ বেতনের টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’

ঢাকার সাভার উপজেলার সাভার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দফায় স্লিপের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। বরাদ্দের ওই পরিমাণ টাকা খরচ করতে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৮ হাজার ৯২৬ টাকার ভ্যাট ও আয়কর দিতে হয়েছে। বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত ভাউচার অনুযায়ী বরাদ্দের ৮৫ হাজার টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো হয়েছে। এর বাইরে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৮ হাজার ৯২৬ টাকা, যার চালান ভাউচারের সঙ্গে রয়েছে।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাঈমা হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি গতানুগতিকভাবে হয়ে আসছে। এর বাইরে আমার আর কিছু বলার নেই।’

জানতে চাইলে সাভার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বরাদ্দ করা অর্থ ছাড় করাতে রীতি বা পদ্ধতিগত কারণে বরাদ্দের সমপরিমাণ ভাউচারের সঙ্গে শিক্ষকদের ভ্যাট ও আয়করের চালান জমা দিতে হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা প্রকৃতপক্ষে ভ্যাট ও আয়করের টাকা নিজেরা খরচ করেন কি না, তা আমার জানা নেই। তবে খরচের ভাউচার ও চালান দেখে মনে হয় ভ্যাট ও আয়করের টাকা তাঁদের পকেট থেকেই খরচ করেন।’

সাভার উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জগদীশ বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ করা বা ভাউচার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত খরচের ভাউচারের সঙ্গে ভ্যাট ও আয়করের খরচ সমন্বয় করে বরাদ্দের সমপরিমাণ ভাউচার দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত