Ajker Patrika

পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিটেই প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ১০ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৪৭
পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিটেই প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভাইস চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ১০ 

প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত আনুমানিক ১০টা পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইল এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় ওই পরীক্ষা শুরু হয়। চক্রটি পরীক্ষা শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে হল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। 

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) অফিসের বরখাস্ত কর্মকর্তা এবং মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। 

গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ৬টি, মাস্টারকার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ৬টি, ব্যাংকের চেক ৫টি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৭টি, স্মার্টফোন ১০টি, বাটন মোবাইল ৬টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়। 

আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ কাকরাইলের নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুজন পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, কাফরুল সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্রের খসড়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ডিবি পুলিশের আরেকটি দল বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।’ 

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা জিনিসপত্রডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, এর আগেও বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর সমাধান করে সরবরাহ করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা পরীক্ষা শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে হলের বাইরে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়।’ 

হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, অল আমিন সিদ্দিকী আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গ্রেপ্তার আসামিরা অন্যান্য আসামির যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে বাইরের ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্টওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করত।’ 

ডিবি পুলিশ জানায়, এর আগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বিমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক, বিকাশের মাধ্যমে এবং নগদে হাতিয়ে নিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত