রায়পুরায় সরকারি রাস্তার ইটে তৈরি হচ্ছে ব্যক্তিগত ঘর

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৫: ১৭

নরসিংদীর রায়পুরায় সংস্কারকাজের জন্য সরকারি রাস্তা থেকে তোলা ইট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই সদস্য ও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এসব ইট ব্যবহার করা হচ্ছে ঘর তৈরির কাজে। এই ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা হলেন রায়পুরা উপজেলার রাধানগর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাজল, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এসডু মেম্বার ও স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার গুকলনগর গ্রামের ইটের সলিংয়ের রাস্তা থেকে ওঠানো ইটগুলো সেলিম মিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়ির পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এরপাশেই তাঁর ভাই রফিকুলের বাড়িতে ওই স্তূপ থেকে ইট ধুয়ে পরিষ্কার করে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গুকলনগর গ্রামের একটি ইটের সলিংয়ের রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সংস্কারের জন্য প্রায় তিন মাস আগে টেন্ডার দেওয়া হয়। স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৫০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তাটির সংস্কারের দরপত্র কিনে কাজ শুরু করেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গুকলনগর গ্রামের আসাদ মিয়ার দোকান থেকে হাসিনের বাড়ি পর্যন্ত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ অর্থায়নে ইটের সলিংয়ের রাস্তা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান শেষে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বুঝিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার কার্যক্রম শুরু করার আগে রাস্তা পরিষ্কার করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে (ইউপি) বলে।

ইউপির চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য কাজল ও এসডু মেম্বারকে রাস্তার ইট উঠিয়ে স্থানীয় সেলিম মিয়ার বাড়িতে স্তূপ করে রাখার নির্দেশ দেন। দুই মাস আগে সেলিম মিয়ার বাড়িতে স্তূপ আকারে ইটগুলো রাখা হয়েছিল। এসব পুরোনো ইট দিয়ে ইউপির তত্ত্বাবধানে নতুন আরেকটি রাস্তা নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেলিম মিয়া তাঁর ভাইয়ের কাছে প্রায় দেড় হাজার ইট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গুকলনগর গ্রামে স্তূপ করে রাখা সরকারি রাস্তার ইট।ইট বিক্রির বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘শ্রমিক দিয়ে ওঠানো ইটগুলো আমার বাড়িতে রাখতে বলে। ইট উঠাতে শ্রমিক খরচ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মেম্বারদের বলে শ্রমিক খরচের টাকার জন্য দেড় হাজার ইট বিক্রি করি, এখনো টাকা পাইনি। নতুন রাস্তার কাজের সময় নতুন ইট কিনে দেব।’

ইউপি সদস্য কাজল মেম্বার বলেন, ‘ইট উঠাতে সেলিম মিয়া খরচ করে। ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে টাকা না থাকায় টাকাটা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি দেড় হাজার ইট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।’

ইউপি সদস্য এসডু বলেন, ‘এই ইট দিয়ে গ্রামের ভেতর অন্য একটি রাস্তা নির্মাণে পরিকল্পনা করে সেলিম মিয়ার বাড়িতে ইটগুলো রাখা হয়েছে। ইট বিক্রি করা অন্যায়। হয়তো শ্রমিক খরচের টাকা দিতে তিনি বিক্রি করেছেন।’

রাধানগর ইউপির চেয়ারম্যান খোর্শেদ আলম তপন বলেন, ‘সরকারি ইট বিক্রির এখতিয়ার কারও নেই। ইউপি সদস্যদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়ার বাড়িতে ইটগুলো রাখতে বলেছি। নতুন প্রকল্প রেজুলেশন করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। মনে হয় আমাকে ফাঁসাতে ইউপি সদস্য কাজল ও এসডু মিলে এই কাজ করেছে। এরই মধ্যে শুনেছি কাজল মেম্বার দুই গাড়ি ইটও বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সচিবের কাছে শ্রমিক খরচ বাবদ ভাউচার জমা দিয়েছেন তিনি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরকারি ইট বিক্রির এখতিয়ার কারও নেই। ইউপি সদস্যদেরকে ডেকে এনে বিষয়টি দেখছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ট্রেনে হামলা, কয়েকজন জখম, ট্রেন চলাচল বন্ধ

স্বামীও জানতেন না স্ত্রী ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রী নন

ঢাকার যানজট নিরসনে ৫ কোটির সিগন্যাল ব্যবস্থা, বাস্তবায়নে লাগবে ৬ মাস

১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন, আছেন যাঁরা

এস আলমের ঋণ জালিয়াতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত