আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার সুরিটোলা স্কুলের মাঠে খেলছিল একদল শিশু। পাশেই এক থুত্থুরে বুড়োর টং দোকান। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, দোকানির বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। সুরিটোলা পুকুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি হেসে বললেন, ‘আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক এখানেই ছিল সুরিটোলা পুকুর।’
ঢাকার পুরোনো কিছু পুকুর খুঁজতে গিয়ে এ রকম অভিজ্ঞতা এ প্রতিবেদকের কয়েকবারই হয়েছে। জলাশয়ের জায়গায় পাওয়া গেছে মাটি ফেলে ভরাট করা জমি, স্কুলভবন বা বিপণিবিতান।
বংশালের অদূরেই মুকিম বাজার এলাকা। সেখানে ছিল বাগিচা পুকুর এবং মৌলভি তালবা নামের দুটি পুকুর। তবে খোঁজ করে দেখা যায়, স্থানীয় লোকের অধিকাংশই এগুলোর নামও শোনেননি। শেষমেশ রিপন নামের ৬০ বছর বয়সী এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বর্তমান ভৈরব মার্কেট এবং জাফর মার্কেটের জায়গাতেই একসময় দুটি পুকুর ছিল। সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর আগে। আবেগপ্রবণ হয়ে প্রৌঢ় রিপন বললেন, ‘এ পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’
বাগিচা পুকুরের কাছাকাছি থাকা শামসাবাদ পুকুরও অস্তিত্ব হারিয়েছে। আনুমানিক চার দশক আগের পুকুরটি ভরাট হয়ে পরিণত হয়েছে শামসাবাদ খেলার মাঠে। মোহাম্মদপুর অঞ্চলের বছিলা ভাঙা মসজিদের কাছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর ছিল। স্থানীয়রা জানালেন ২০১৬ সালেই সেটি দখল করে ভরাট করা হয়। নির্মাণ করা হয় বাড়ি।
ঢাকা শহরজুড়েই একসময় ছিল এ রকম বহু পুকুর ও জলাভূমি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বলি হয়েছে তার একটা বড় অংশ। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুরও।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) ২০২১ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, তিন-চার দশকে ঢাকার প্রায় ১৯০০ পুকুর ও জলাশয় দখল এবং ভরাট হয়েছে। ১৯৮৫ সালেও শহরে ২ হাজারের বেশি পুকুর ছিল। আরডিআরসির তখনকার হিসাবে (২০২১) ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪১।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুকুর ও জলাশয় শুধু একটি জনপদ বা শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি নয়, তা ঐতিহ্যেরও অংশ। একটি জনপদের নাগরিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে এসব জলাশয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শহরে সরকারি পুকুরের পাশাপাশি বহু ব্যক্তিমালিকানা পুকুরও ছিল। অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো সেগুলো ভরাট করে ফেলেছেন।
‘এই পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’ প্রৌঢ় রিপন মুকিম বাজারের ভরাট হওয়া বাগিচা পুকুর ও মৌলভি তালবা নিয়ে আক্ষেপ করে
সরকার ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে আইন করে। সে আইনে বলা হয়েছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা সে জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আইন হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হচ্ছে কি না, কোনো সংশ্লিষ্ট সংস্থা সেটার দেখভাল করার কার্যক্রম নেয়নি।
পুরান ঢাকায় এখনো টিকে রয়েছে শতবর্ষী কয়েকটি পুকুর। এর মধ্যে রয়েছে নবাববাড়ী পুকুর বা গোলতালাব, বংশালের পঞ্চায়েত পুকুর, আলুবাজার পুকুর, হোসেনি দালান পুকুর, ধূপখোলা পুকুর ইত্যাদি। স্থানীয়দের পরিচর্যায় নবাববাড়ী পুকুর ও বংশালের পঞ্চায়েত পুকুরের চেহারা বেশ ভালো। তবে সিক্কাটুলির প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো আলী মোল্লা পুকুরটির অবস্থা বেহাল। অযত্ন-অবহেলায় কোনোমতে টিকে রয়েছে এটি।
নগরের পুকুর ও জলাশয়ের অবস্থা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর ও জলাশয়গুলো আবার খনন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে, সেগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি জলাশয়গুলোতে মাছ চাষের উপযোগিতা বৃদ্ধি করতে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার সুরিটোলা স্কুলের মাঠে খেলছিল একদল শিশু। পাশেই এক থুত্থুরে বুড়োর টং দোকান। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, দোকানির বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। সুরিটোলা পুকুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি হেসে বললেন, ‘আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক এখানেই ছিল সুরিটোলা পুকুর।’
ঢাকার পুরোনো কিছু পুকুর খুঁজতে গিয়ে এ রকম অভিজ্ঞতা এ প্রতিবেদকের কয়েকবারই হয়েছে। জলাশয়ের জায়গায় পাওয়া গেছে মাটি ফেলে ভরাট করা জমি, স্কুলভবন বা বিপণিবিতান।
বংশালের অদূরেই মুকিম বাজার এলাকা। সেখানে ছিল বাগিচা পুকুর এবং মৌলভি তালবা নামের দুটি পুকুর। তবে খোঁজ করে দেখা যায়, স্থানীয় লোকের অধিকাংশই এগুলোর নামও শোনেননি। শেষমেশ রিপন নামের ৬০ বছর বয়সী এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বর্তমান ভৈরব মার্কেট এবং জাফর মার্কেটের জায়গাতেই একসময় দুটি পুকুর ছিল। সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর আগে। আবেগপ্রবণ হয়ে প্রৌঢ় রিপন বললেন, ‘এ পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’
বাগিচা পুকুরের কাছাকাছি থাকা শামসাবাদ পুকুরও অস্তিত্ব হারিয়েছে। আনুমানিক চার দশক আগের পুকুরটি ভরাট হয়ে পরিণত হয়েছে শামসাবাদ খেলার মাঠে। মোহাম্মদপুর অঞ্চলের বছিলা ভাঙা মসজিদের কাছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর ছিল। স্থানীয়রা জানালেন ২০১৬ সালেই সেটি দখল করে ভরাট করা হয়। নির্মাণ করা হয় বাড়ি।
ঢাকা শহরজুড়েই একসময় ছিল এ রকম বহু পুকুর ও জলাভূমি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বলি হয়েছে তার একটা বড় অংশ। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুরও।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) ২০২১ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, তিন-চার দশকে ঢাকার প্রায় ১৯০০ পুকুর ও জলাশয় দখল এবং ভরাট হয়েছে। ১৯৮৫ সালেও শহরে ২ হাজারের বেশি পুকুর ছিল। আরডিআরসির তখনকার হিসাবে (২০২১) ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪১।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুকুর ও জলাশয় শুধু একটি জনপদ বা শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি নয়, তা ঐতিহ্যেরও অংশ। একটি জনপদের নাগরিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে এসব জলাশয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শহরে সরকারি পুকুরের পাশাপাশি বহু ব্যক্তিমালিকানা পুকুরও ছিল। অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো সেগুলো ভরাট করে ফেলেছেন।
‘এই পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’ প্রৌঢ় রিপন মুকিম বাজারের ভরাট হওয়া বাগিচা পুকুর ও মৌলভি তালবা নিয়ে আক্ষেপ করে
সরকার ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে আইন করে। সে আইনে বলা হয়েছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা সে জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আইন হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হচ্ছে কি না, কোনো সংশ্লিষ্ট সংস্থা সেটার দেখভাল করার কার্যক্রম নেয়নি।
পুরান ঢাকায় এখনো টিকে রয়েছে শতবর্ষী কয়েকটি পুকুর। এর মধ্যে রয়েছে নবাববাড়ী পুকুর বা গোলতালাব, বংশালের পঞ্চায়েত পুকুর, আলুবাজার পুকুর, হোসেনি দালান পুকুর, ধূপখোলা পুকুর ইত্যাদি। স্থানীয়দের পরিচর্যায় নবাববাড়ী পুকুর ও বংশালের পঞ্চায়েত পুকুরের চেহারা বেশ ভালো। তবে সিক্কাটুলির প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো আলী মোল্লা পুকুরটির অবস্থা বেহাল। অযত্ন-অবহেলায় কোনোমতে টিকে রয়েছে এটি।
নগরের পুকুর ও জলাশয়ের অবস্থা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর ও জলাশয়গুলো আবার খনন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে, সেগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি জলাশয়গুলোতে মাছ চাষের উপযোগিতা বৃদ্ধি করতে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হাজী তাহের উদ্দিন ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের জমি দখল করে পাকা দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্পত্তি রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণকাজ বন্ধে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেযশোরের কেশবপুরে পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ওই ‘বৌমা-শাশুড়ি’ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেহবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এ সব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
৩ ঘণ্টা আগেস্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা অনেক পুরোনো। কতগুলো বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তসম্পর্ক তৈরি হয়নি। ফলে এগুলো কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারছে না। অসামঞ্জস্যপূর্ণ এ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি।
৩ ঘণ্টা আগে