ঢাবি প্রতিনিধি
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের কারণে শিক্ষকসমাজের মান নষ্ট হচ্ছে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম এবং এর অনেক পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের দেখলে বা তাঁদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। আপনাদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষকসমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালন, মূল্যায়ন ও উন্নয়নকে ঘিরে। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবার-পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেওয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। আবার অনেক শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঐচ্ছিক দায়িত্ব মনে করেন। বৈকালিক কোর্স বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকেই তাঁরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে এটি খুবই বেমানান।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সবাই কৃতী ও সেরা ছাত্র ছিলেন। আমার বিশ্বাস, আপনারা যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হতেন, কিন্তু জীবনের মহান ব্রত হিসেবে শিক্ষকতাকেই আপনারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই শিক্ষক হিসেবে নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকবেন, এটাই সকলের প্রত্যাশা। আমরা চাই উপাচার্যের নেতৃত্বে ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হোক। আপনারা (শিক্ষকগণ) হয়ে উঠুন সমাজে মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট নেওয়া পর্যন্ত পদে পদে হয়রান হতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার ও ক্যারিয়ার প্ল্যান ইউনিট চালু করার আহ্বানও জানান তিনি। একই সঙ্গে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা ও স্টুডেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট গঠন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করেন আচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের পথপ্রদর্শক। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনও ইতিহাসের অংশ।’
প্রগতি, আধুনিকতা ও সহনশীলতাকে ধারণ করে সকল প্রকার সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মুক্ত রেখে সত্য ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অধিকতর কার্যকর অবদান রাখার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি প্রত্যাশা রাখেন রাষ্ট্রপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যঁ তিরোল। তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ (অনারিজ কজা) প্রদান করা হয়।
স্নাতকদের উদ্দেশে জ্যঁ তিরোল বলেন, ‘আপনারা ভাবতে পারেন, নোবেল বিজয়ীরা সুপারম্যানের মতো কোনো অসাধারণ মানুষ। নোবেল বিজয়ীসহ পেশাগতভাবে সফল যেকোনো মানুষের গল্পটা কঠোর নীতিনিষ্ঠতার। স্নাতকেরা, আপনাদের কঠোর পরিশ্রমী ও নিজের ক্ষেত্র নিয়ে প্রগাঢ় উৎসাহী হতে হবে এবং একই সঙ্গে তা সম্পর্কে সমালোচনাপ্রবণ (ক্রিটিক্যাল) হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে আপনাদের শিখতে হবে, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় যাওয়ার স্পৃহা থাকতে হবে। সর্বোপরি আপনাদের হতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নিজেদের মেধার ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। থামবেন না, এগিয়ে চলবেন। আমার পরামর্শ থাকবে, স্নাতক হওয়ার এই যাত্রায় যাঁরা আপনাদের সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।’
জ্যঁ তিরোল আরও বলেন, ‘নতুন ডিগ্রি আপনাদের সামনে অনেক সুযোগের পাশাপাশি অনেক দায়িত্বও হাজির করবে ৷ ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে কীভাবে সমাজকে উপকৃত করা যায়, পৃথিবী ও এর মানুষকে রক্ষায় কীভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করতে পারি, জনতোষণবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিপরীতে কীভাবে আমরা যুক্তিকে দাঁড় করাব ইত্যাদি আপনাদের ভাবতে হবে। বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন নিয়ে আপনাদের গর্বিত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণে আরও কাজ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। তোমরা (গ্র্যাজুয়েটরা) সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারিগর।’
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। তোমরা সর্বদা এর ইতিবাচক এবং নীতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। মানবসভ্যতার উন্নয়নে যেই প্রযুক্তি তোমাদের ব্যবহার করার কথা সচেতন থেকো, সেই প্রযুক্তি যেন তোমাদের ব্যবহার করে না ফেলে। অর্জিত এই বিদ্যা, এই সনদ, এই প্রজ্ঞা সমাজে আলো ছড়ানোর আগে যেন তোমাদের অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত করে, সেই চেষ্টা করবে। নিজ পরিবার ঘর হচ্ছে প্রশান্তির সর্বোচ্চ জায়গা। সুস্থ সুন্দর পারিবারিক জীবন একটি সুন্দর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।’
সমাবর্তন শুরু হওয়ার আগে থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাফেরা বন্ধ ছিল। সমাবর্তনের আমেজে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন রূপ ধারণ করে। কোথাও গ্র্যাজুয়েটরা ছবি তুলছেন, কোথাও ভিডিও ধারণ চলছে কিংবা কোথাও চলছে আড্ডা। রাষ্ট্রপতির উদ্বোধন ঘোষণা করার পর কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করা হয়। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের দলীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেন। তাঁদের মধ্যে ২২ হাজার ২৮৭ জন ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। অধিভুক্ত সাত কলেজের ৭ হাজার ৭৯৬ জন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। সমাবর্তনে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়, যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া, এবার ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইউজিসি সদস্যবৃন্দ এবং অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের অধ্যক্ষ-ইনস্টিটিউটের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের কারণে শিক্ষকসমাজের মান নষ্ট হচ্ছে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম এবং এর অনেক পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের দেখলে বা তাঁদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। আপনাদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষকসমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালন, মূল্যায়ন ও উন্নয়নকে ঘিরে। কিন্তু ইদানীং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবার-পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেওয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। আবার অনেক শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঐচ্ছিক দায়িত্ব মনে করেন। বৈকালিক কোর্স বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকেই তাঁরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে এটি খুবই বেমানান।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সবাই কৃতী ও সেরা ছাত্র ছিলেন। আমার বিশ্বাস, আপনারা যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হতেন, কিন্তু জীবনের মহান ব্রত হিসেবে শিক্ষকতাকেই আপনারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই শিক্ষক হিসেবে নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকবেন, এটাই সকলের প্রত্যাশা। আমরা চাই উপাচার্যের নেতৃত্বে ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হোক। আপনারা (শিক্ষকগণ) হয়ে উঠুন সমাজে মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট নেওয়া পর্যন্ত পদে পদে হয়রান হতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার ও ক্যারিয়ার প্ল্যান ইউনিট চালু করার আহ্বানও জানান তিনি। একই সঙ্গে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা ও স্টুডেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড সাপোর্ট ইউনিট গঠন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করেন আচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের পথপ্রদর্শক। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনও ইতিহাসের অংশ।’
প্রগতি, আধুনিকতা ও সহনশীলতাকে ধারণ করে সকল প্রকার সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মুক্ত রেখে সত্য ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অধিকতর কার্যকর অবদান রাখার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি প্রত্যাশা রাখেন রাষ্ট্রপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যঁ তিরোল। তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ (অনারিজ কজা) প্রদান করা হয়।
স্নাতকদের উদ্দেশে জ্যঁ তিরোল বলেন, ‘আপনারা ভাবতে পারেন, নোবেল বিজয়ীরা সুপারম্যানের মতো কোনো অসাধারণ মানুষ। নোবেল বিজয়ীসহ পেশাগতভাবে সফল যেকোনো মানুষের গল্পটা কঠোর নীতিনিষ্ঠতার। স্নাতকেরা, আপনাদের কঠোর পরিশ্রমী ও নিজের ক্ষেত্র নিয়ে প্রগাঢ় উৎসাহী হতে হবে এবং একই সঙ্গে তা সম্পর্কে সমালোচনাপ্রবণ (ক্রিটিক্যাল) হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে আপনাদের শিখতে হবে, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় যাওয়ার স্পৃহা থাকতে হবে। সর্বোপরি আপনাদের হতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নিজেদের মেধার ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। থামবেন না, এগিয়ে চলবেন। আমার পরামর্শ থাকবে, স্নাতক হওয়ার এই যাত্রায় যাঁরা আপনাদের সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।’
জ্যঁ তিরোল আরও বলেন, ‘নতুন ডিগ্রি আপনাদের সামনে অনেক সুযোগের পাশাপাশি অনেক দায়িত্বও হাজির করবে ৷ ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে কীভাবে সমাজকে উপকৃত করা যায়, পৃথিবী ও এর মানুষকে রক্ষায় কীভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করতে পারি, জনতোষণবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিপরীতে কীভাবে আমরা যুক্তিকে দাঁড় করাব ইত্যাদি আপনাদের ভাবতে হবে। বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন নিয়ে আপনাদের গর্বিত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণে আরও কাজ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। তোমরা (গ্র্যাজুয়েটরা) সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারিগর।’
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। তোমরা সর্বদা এর ইতিবাচক এবং নীতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। মানবসভ্যতার উন্নয়নে যেই প্রযুক্তি তোমাদের ব্যবহার করার কথা সচেতন থেকো, সেই প্রযুক্তি যেন তোমাদের ব্যবহার করে না ফেলে। অর্জিত এই বিদ্যা, এই সনদ, এই প্রজ্ঞা সমাজে আলো ছড়ানোর আগে যেন তোমাদের অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত করে, সেই চেষ্টা করবে। নিজ পরিবার ঘর হচ্ছে প্রশান্তির সর্বোচ্চ জায়গা। সুস্থ সুন্দর পারিবারিক জীবন একটি সুন্দর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।’
সমাবর্তন শুরু হওয়ার আগে থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাফেরা বন্ধ ছিল। সমাবর্তনের আমেজে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন রূপ ধারণ করে। কোথাও গ্র্যাজুয়েটরা ছবি তুলছেন, কোথাও ভিডিও ধারণ চলছে কিংবা কোথাও চলছে আড্ডা। রাষ্ট্রপতির উদ্বোধন ঘোষণা করার পর কোরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করা হয়। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের দলীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেন। তাঁদের মধ্যে ২২ হাজার ২৮৭ জন ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। অধিভুক্ত সাত কলেজের ৭ হাজার ৭৯৬ জন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। সমাবর্তনে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়, যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া, এবার ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইউজিসি সদস্যবৃন্দ এবং অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের অধ্যক্ষ-ইনস্টিটিউটের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম আদালতে ইসকন নেতা ও সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নিহতের ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত ছিল বন্দরনগরী। গতকাল সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার
১৯ মিনিট আগেহবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। আজ মঙ্গলবার উপজেলার পুকড়া এলাকায় নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১ ঘণ্টা আগেববি, ট্রেজারার, সেনা কর্মকর্তা, বরিশাল, জেলার খবর
১ ঘণ্টা আগেঝালকাঠির নলছিটিতে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি কর্তৃক ঝালকাঠি-বরিশাল মহাসড়কে চেকপোস্টের নামে যাত্রী-চালকদের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর প্রতিবাদে বেলা ৩টা থেকে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে।
১ ঘণ্টা আগে