প্রতিনিধি, রাজনগর(মৌলভীবাজার)
শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সোলাইমান মোল্লা (৪৫)। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ভাঙারির ব্যবসা করেন। সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় ভাঙারি কেনাবেচা করে বাসায় ফিরছিলেন। হুট করে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান, তারপরই সারা শরীরে আগুন লেগে যায়। শ্বাসনালিসহ শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে তাঁর।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বুধবার বিকেলে সিলিন্ডারের গ্যাস ছড়িয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ব্যক্তিদের অধিকাংশই সোলাইমানের মতো পথচারী। ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ ৩৬ জন। তাদের ৩৪ জন রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দগ্ধদের কারও অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয়।
সোলেমান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে জীবিকার তাগিদে গাজীপুর এসেছিলেন। স্ত্রী শাপলা কাজ করেন একটি কারখানায়। গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে কথা হয় শাপলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অবস্থা বালো না বাজান। মানুষটার এক পা খাটো। আগুনে পুইড়া হেইডা আরও খাটো হয়া গেছে। দেহার মতো অবস্থা নাই। খালি বাড়িয়ালার দোষে আইজকা আমার স্বামীর এই দশা। বাড়িয়ালার কী বিচার অবো?’
বগুড়ার শিববাড়ির মনসুর পেশায় পোশাককর্মী। তাঁর শ্বাসনালিসহ শরীরের প্রায় সবটুকুই পুড়েছে। খবর শুনে বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন ভাই আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এখনো মনসুরকে দেখতে পারি নাই। কী অবস্থা জানি না। ওর আশপাশে যারা ছিল, তাদের কাছে শুনেছি, ইফতারি কিনতে যাওয়ার সময় তার শরীরে সিলিন্ডারের আগুন লাগছে।’
ইফতারের জন্য রুটি বানাচ্ছিলেন নাজমা বেগম। স্বামী আবদুল কুদ্দুস সহযোগিতা করছিলেন। এমন সময় বাড়ির বাইরে শোরগোল শুনে এগিয়ে যান কুদ্দুস। দেখতে পান, ঘরের কাছেই একটি লিক হওয়া গ্যাসের সিলিন্ডার এনে রেখেছেন বাড়ির মালিক। সেটা থেকে গ্যাস বের হচ্ছে, আর অনেক মানুষ ভিড় করে দেখছে। সে দলে যোগ দেন কুদ্দুসও। কিছুক্ষণ পর সারা শরীরে আগুন নিয়ে ঘরে ফেরেন কুদ্দুস।
শরীরে ৮৫ শতাংশ পোড়ার ক্ষত নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী নাজমা বলেন, ‘শরীরে আগুন নিয়া আইসা স্বামী আমারে কইতাছে, “আমারে বাঁচা। ফ্রিজের মধ্যে ডিম আছে, বাইর কইরা আমার শরীরে ভাইঙ্গা দে।” ফ্রিজে ১০-১২টা ডিম আছিল। আমি সবডিই ভাইঙ্গা তার গায়ে মাইখা দিছি। একসময় স্বামীর চেহারা দেইহা আমিই ভয় পায়া যাই। এ্যার মধ্যেই কহন জানি আমি বেহুঁশ (অজ্ঞান) হয়া গেছি।’
আবদুল কুদ্দুস, সোলাইমান, মনসুরসহ যাঁরা দগ্ধ হয়েছেন, তাঁদের সবার স্বজনেরা ভিড় করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছয়তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের বাইরে। তাঁদের সময় কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের প্রধান ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘দগ্ধদের পাঁচ-ছয়জন ছাড়া সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের বলেন, দগ্ধ রোগীদের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবারই শ্বাসনালি পুড়েছে। ছয়জন আইসিইউতে আছে। তাঁদের ৯০ ভাগের বেশি দগ্ধ। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ বছর বা তার কম বয়সী ৭ জন এবং ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৬ জন। এই ১৩ জনের প্রত্যেকের শরীরের ১০ শতাংশের বেশি পুড়েছে। কারও কারও ৩০ ভাগের বেশি পুড়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে আগুনের ঘটনায় গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন—
শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সোলাইমান মোল্লা (৪৫)। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ভাঙারির ব্যবসা করেন। সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় ভাঙারি কেনাবেচা করে বাসায় ফিরছিলেন। হুট করে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান, তারপরই সারা শরীরে আগুন লেগে যায়। শ্বাসনালিসহ শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে তাঁর।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বুধবার বিকেলে সিলিন্ডারের গ্যাস ছড়িয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ব্যক্তিদের অধিকাংশই সোলাইমানের মতো পথচারী। ওই ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ ৩৬ জন। তাদের ৩৪ জন রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দগ্ধদের কারও অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয়।
সোলেমান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে জীবিকার তাগিদে গাজীপুর এসেছিলেন। স্ত্রী শাপলা কাজ করেন একটি কারখানায়। গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে কথা হয় শাপলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অবস্থা বালো না বাজান। মানুষটার এক পা খাটো। আগুনে পুইড়া হেইডা আরও খাটো হয়া গেছে। দেহার মতো অবস্থা নাই। খালি বাড়িয়ালার দোষে আইজকা আমার স্বামীর এই দশা। বাড়িয়ালার কী বিচার অবো?’
বগুড়ার শিববাড়ির মনসুর পেশায় পোশাককর্মী। তাঁর শ্বাসনালিসহ শরীরের প্রায় সবটুকুই পুড়েছে। খবর শুনে বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন ভাই আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এখনো মনসুরকে দেখতে পারি নাই। কী অবস্থা জানি না। ওর আশপাশে যারা ছিল, তাদের কাছে শুনেছি, ইফতারি কিনতে যাওয়ার সময় তার শরীরে সিলিন্ডারের আগুন লাগছে।’
ইফতারের জন্য রুটি বানাচ্ছিলেন নাজমা বেগম। স্বামী আবদুল কুদ্দুস সহযোগিতা করছিলেন। এমন সময় বাড়ির বাইরে শোরগোল শুনে এগিয়ে যান কুদ্দুস। দেখতে পান, ঘরের কাছেই একটি লিক হওয়া গ্যাসের সিলিন্ডার এনে রেখেছেন বাড়ির মালিক। সেটা থেকে গ্যাস বের হচ্ছে, আর অনেক মানুষ ভিড় করে দেখছে। সে দলে যোগ দেন কুদ্দুসও। কিছুক্ষণ পর সারা শরীরে আগুন নিয়ে ঘরে ফেরেন কুদ্দুস।
শরীরে ৮৫ শতাংশ পোড়ার ক্ষত নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী নাজমা বলেন, ‘শরীরে আগুন নিয়া আইসা স্বামী আমারে কইতাছে, “আমারে বাঁচা। ফ্রিজের মধ্যে ডিম আছে, বাইর কইরা আমার শরীরে ভাইঙ্গা দে।” ফ্রিজে ১০-১২টা ডিম আছিল। আমি সবডিই ভাইঙ্গা তার গায়ে মাইখা দিছি। একসময় স্বামীর চেহারা দেইহা আমিই ভয় পায়া যাই। এ্যার মধ্যেই কহন জানি আমি বেহুঁশ (অজ্ঞান) হয়া গেছি।’
আবদুল কুদ্দুস, সোলাইমান, মনসুরসহ যাঁরা দগ্ধ হয়েছেন, তাঁদের সবার স্বজনেরা ভিড় করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছয়তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের বাইরে। তাঁদের সময় কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের প্রধান ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘দগ্ধদের পাঁচ-ছয়জন ছাড়া সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের বলেন, দগ্ধ রোগীদের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবারই শ্বাসনালি পুড়েছে। ছয়জন আইসিইউতে আছে। তাঁদের ৯০ ভাগের বেশি দগ্ধ। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ বছর বা তার কম বয়সী ৭ জন এবং ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৬ জন। এই ১৩ জনের প্রত্যেকের শরীরের ১০ শতাংশের বেশি পুড়েছে। কারও কারও ৩০ ভাগের বেশি পুড়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে আগুনের ঘটনায় গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন—
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ছে। বিষমুক্ত এই পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া চাষাবাদে খরচ কম লাগছে।
২৭ মিনিট আগেরংপুর বিভাগীয় সনাতনী সমাবেশস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। রংপুর জেলা স্কুল মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মাহীগঞ্জ কলেজ মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে...
৪২ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর অন্যতম ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছে ছাত্রদল। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে সোহেল রানাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগও অস্বীকার করেছে রাজশাহী নগর ছাত্রদল...
১ ঘণ্টা আগেদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের অনুসমর্থনের ভিত্তিতে একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য গত ৪ বছর ধরে আমাদের এই সংগঠন কাজ করছে। গত ১৮ আগস্ট শাহবাগ চত্বরে এক সংহতি সমাবেশের মাধ্যমে আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর...
১ ঘণ্টা আগে