হয়ে গেল মীর মঞ্জিলের ‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিজ’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ১৭
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ৩৯
সঞ্চালক মাহবুব উর রহমানের সঙ্গে আহমেদ ইকবাল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার অন্যতম প্রাচীন জনপদ মোহাম্মদপুর। কয়েক শ বছরের স্মৃতি নিয়ে নিয়ে আজও মোহাম্মদপুর ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত শতকের বিশ শতক থেকে ঢাকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই এলাকার জনবসতির গল্প নানান ঘাত–প্রতিঘাতে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৪৭–এর দেশভাগের পর একসময়ের গ্রামীণ এই জনপদ মোহাম্মদপুর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এ এলাকার আদি বাসিন্দাদের চোখে দেখা সে ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়াস ‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিজ’।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের মীর মঞ্জিলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁদের পুরোনো দিনের বৈচিত্র্যময় গল্প শোনালেন। সূচনাপর্বে মীর মঞ্জিল নামে খ্যাত প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো বাড়িটির সংস্কার নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। মোহাম্মদপুরে বেড়ে ওঠা স্থপতিরা এ বাড়ির মূল কাঠামো অক্ষত রেখে সংস্কার করেন। সংস্কারের পর ভাবনাটি ‘আইএবি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ অর্জন করে।

এরপর মোহাম্মদপুর এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পরিক্রমা নিয়ে আলোচনা করেছেন শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ। তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের স্থানীয় ইতিহাস শুধু ঢাকার ইতিহাস নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।’ এ এলাকার নানান ধর্ম, মত ও পেশাজীবীর সহাবস্থানের কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের বৈচিত্র্যময় অতীত এখন বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে।’

‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিজ’–এর ধারাবাহিক আয়োজনের উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন মাহবুব উর রহমান। তাঁর বিশেষ আগ্রহে বাড়িটি সম্প্রতি স্থানীয় ইতিহাস সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সঞ্চালনার ফাঁকে তিনি জানান, আশির দশকে এই বাড়িতে তিনি বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। তৎকালীন নূরজাহান রোড ও মোহাম্মদপুরের সামাজিক সংস্কৃতি অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলার উৎসবমুখর আয়োজনগুলো আজও তাঁকে স্মৃতিকাতর করে তোলে।

মোহাম্মদপুরের ইতিহাস শোনাচ্ছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক আহমেদ ইকবাল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদপুরের ইতিহাস শোনাচ্ছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক আহমেদ ইকবাল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

উদ্বোধনী পর্বের মধ্যমণি ছিলেন আহমেদ ইকবাল হাসান। পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে সপরিবারে তিনি মোহাম্মদপুরে বসবাস করছেন। তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি মোহাম্মদপুরে ‘মামা রেস্তোরাঁ’ নামে একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে শুরু করেন। এটি এই অঞ্চলের অন্যতম পুরোনো রেস্তোরাঁগুলোর অন্যতম। এই রেস্তোরাঁর খ্যাতির কারণেই তিনি স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘ইকবাল মামা’ হিসেবে পরিচিতি পান। কর্মজীবনের একপর্যায়ে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আহমেদ ইকবাল হাসান আশির দশকের শুরুর দিকে মোহাম্মদপুরের প্রথম নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে এ অঞ্চলের জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হন।

‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিজ’ অনুষ্ঠানটিতে আসা দর্শকদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিজ’ অনুষ্ঠানটিতে আসা দর্শকদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদপুরে গড়ে ওঠার ইতিহাস নিয়ে তিনি জানান, পঞ্চাশের দশকের শেষে যখন তাঁরা মোহাম্মদপুরে আসেন তখন এটি ছিল ‘বড়াব’ নামে একটি গ্রাম। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদপুরের নাম প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজেদের শৈশবের খেলার মাঠকে জেনেভা ক্যাম্পে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়ার গল্প শোনান তিনি। তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে আসে ষাটের দশকের হিন্দু-মুসলিম গভীর সম্পর্কের গল্প, ১৯৬৫ সালের বাঙালি–বিহারি দাঙ্গা এবং তার প্রতিরোধের গল্প।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তর পর্বে উঠে আসে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন সড়কের নামকরণের ইতিহাস, স্থাপনার নকশা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মোহাম্মদপুর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানীয় ইতিহাসের প্রসঙ্গ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত