Ajker Patrika

খালে নয়, সড়কের ওপরেই সেতু

কিশোরগঞ্জ ও অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি
পিচ ঢালাইয়ের সড়কের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বাজুরির মোহনতলা বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিচ ঢালাইয়ের সড়কের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বাজুরির মোহনতলা বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেতুর নিচ দিয়ে খাল বা নদী বয়ে যাওয়ার কথা। দুই প্রান্তে থাকবে সড়ক। কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করেছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের সেতুটি। পিচঢালাই সড়কের ওপরেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। দেখে উড়ালসেতু মনে হলেও এর ডানা কাটা। দুই প্রান্তে কোনো সড়ক বা যোগাযোগের পথ নেই। কোনো পথচারী বা যানবাহন ওঠেনি সেতুটিতে। কাছাকাছি এলাকায় এমন ‘অপ্রয়োজনীয়’ আরও একটি সেতু রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ আশ্চর্যজনক সেতু দুটির একটি অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়নের বাজুরির মোহনতলা বাজারে মাঝপথে এবং অপরটি মাত্র ৫০০ মিটার পশ্চিমে সাপান্ত বাজারের পাশে অবস্থিত। মোহনতলা বাজারের মাঝপথের ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর সঙ্গে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। বাম পাশে রয়েছে মোহনতলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ডান পাশে বাজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অন্যদিকে, মাত্র কাছেই পশ্চিম দিকে সাপান্ত বাজারের দক্ষিণ পাশের ডোবার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর সংযোগ সড়কও করা হয়নি। ৮ লাখ টাকায় মাটি ভরাট করে সড়ক নির্মাণ এবং সড়ক সংরক্ষণের জন্য ১৪ লাখ টাকার সিমেন্টের ব্লক স্থাপনের কথা থাকলেও বাস্তবে দুই ডানা কাটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রতিটি সেতু নির্মাণে ২৩ লাখ টাকা করে মোট ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের দিকে এগুলো নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রিয়াঙ্কা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বিশ্বম্ভর সাহা সেতু দুটির কাজ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাপান্ত বাজারের কয়েজন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী জানান, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সাপান্ত বাজারসংলগ্ন ডোবার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি সংযোগ সড়কপথ স্থাপনের জন্য ৮ লাখ টাকার মাটি কাটার কাজ নেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রবীন্দ্র চন্দ্র দাস। সড়কের মাটি সংরক্ষণের জন্য সিমেন্টের ব্লক স্থাপনে ১৪ লাখ টাকার কাজ পেয়েছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রামচরণ দাস। কিন্তু বাস্তবে সেতু করা হলেও অন্য কাজ না করেই তাঁরা সেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া সেতুর কাজও নিম্নমানের করা হয়েছে।

মাটি ও ব্লকের কাজ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা রবীন্দ্র চন্দ্র দাস ও যুবলীগ নেতা রামচরণের বক্তব্য নিতে তাঁদের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁদের সাড়া মেলেনি। সেতু দুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রিয়াঙ্কা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বিশ্বম্ভর সাহার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনিও তা ধরেননি।

অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এখানে আসার অনেক আগেই সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। শুনেছি, এখানে বর্ষায় খালে প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে সড়ক টেকে না। তার পরও আমি চেষ্টা করব চলমান কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে সেতু দুটি মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত