হেফাজত আগুন নিয়ে খেলছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬: ৩৫

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সারাদেশে আন্দোলন করেছে হেফাজতে ইসলাম। আন্দোলনকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের বাসভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এসময় নিহত হয় অন্তত ১৩ জন।

হেফাজতের এই কর্মকাণ্ডকে আগুন নিয়ে খেলা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আজ রোববার জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এ মন্তব্য করেন।

হেফাজত নেতাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কিছু হলেই আমাদের আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের অফিস ও বাসায় আগুন দেওয়া হয়। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি। আগুন নিয়ে খেলছে তারা। এক ঘরে আগুন লাগলে তো তা অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে। সেটা কী তাদের হিসাবে নেই? আজকে রেলস্টেশন থেকে শুরু করে, ভূমি অফিস, ডিসি অফিস সব জায়গায় আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে? তাদের মাদ্রাসা, তাদের বাড়িঘর সেগুলোতে যদি আগুন লাগে তখন তারা কী করবে? জনগণ কী বসে বসে এগুলো সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না।

তিনি বলেন, আজকে কী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুরু করলো তাণ্ডব। এই হেফাজত তো একা নয়। হেফাজতের সাথে তো জামায়াত-বিএনপি জড়িত। তাদের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে তো দেখা যায়। হেফাজতের সকলেই যে এর মধ্যে জড়িত তাও কিন্তু নয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে বাধা দিতে বিএনপি হেফাজতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমেই আমরা দেখলাম কী, বিএনপি তাদের সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন সেখানে তাদের আপত্তি।বিএনপির কর্মকাণ্ডে অবাক লাগে। এখানে জ্বালাও পোড়াও যতকিছু করতে হবে সেটার পরামর্শ তারা দিয়েছে।

এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

২৬ মার্চ ও এর আগে পরের ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র পাওয়ার পয়েন্টে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ হেফাজত গুজব ছড়ালো বায়তুল মোকাররমে মানুষ মারা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে সহিংসতা চালায়। ২৭ ও ২৮ তারিখ হেফাজতের পক্ষে বিএনপি–জামায়াতের বিবৃতি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। ২৮ মার্চ হরতাল ডেকে বিনা উসকানিতের সারা দেশে তাণ্ডব চালায়। আওয়ামী লীগ অফিস, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, সরকারি অফিস আদালত, পরিবহনে হামলা, ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়। তারা কোনো ধরনের ধর্মে বিশ্বাস করে যে কোরান শরিফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা বিভিন্ন জায়গায় এই তাণ্ডব চালিয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মে নামে জ্বালাও পোলাও কেন? ২০১৩ সালেও আমরা বিএনপির জ্বালাও পোড়াও দেখেছি।

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রীয়া অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও যান। সেখানে প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রপতি ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে হাত বাড়ালেন। খালেদা জিয়া হাতগুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্ত সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদি সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা ছবি।

উল্লেখ্য, তিন কার্যদিবসে শেষ হলো চলতি একাদশ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশন। আজ রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকালের অন্য অধিবেশনগুলোর মতো এবারও সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। তালিকা ধরে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া সংসদ সদস্যরাই শুধু এ অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মরতদেরও অধিবেশন চলার সময় সংসদ ভবনে প্রবেশ সীমিত ছিল। সুনির্দিষ্ট দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বাইরে কাউকে সংসদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সংসদ অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরাও সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত