ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত: ড. আকবর আলি খান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ১৪: ৩৩
Thumbnail image

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ কখনো সংঘাতের রাজনীতি করতেন না। সবাইকে নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবতেন। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান এসব কথা বলেন।

আজ শনিবার সকালে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আকবর আলি খান। এই অর্থনীতিবিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বেসামরিক ও সামরিক আমলাদের ভূমিকা কী তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।’

আকবর আলি খান আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনেক লিখেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায়, তিনি কোনো স্থায়ী বন্ধুত্বে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ হলো স্থায়ী। কোনো বন্ধুই স্থায়ী নয়। সেই দিক থেকেই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তিনি।’

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বেসরকারি শিক্ষাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, ‘তিনি বুদ্ধিজীবী সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। পদের জন্য নয়, দেশের জন্য এবং সর্ব নাগরিক নামের একটি কমিটি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা। যদিও শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন টিকে থাকেননি, তবু বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজকে গড়ে তোলার জন্য এই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। তিনি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর দুটি ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—তিনি উদারনীতি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন এবং সব দলের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল।’

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সাংগঠনিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আকবর আলি খান বলেন, ‘তাঁর ৮০ বছর উপলক্ষে যে সংবর্ধনা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তাতে দেখা গেছে, সব দলের লোকের তিনি উপকার করেছেন। সবার মতামত ব্যক্ত করার স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। সেখানে এক জায়গায় লেখা ছিল—অধ্যাপক এমাজউদ্দীন যখন ফজলুল হক মুসলিম হলের সহসভাপতি ছিলেন। তখন ফজলুল হক হলের বার্ষিক ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোজসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। এ ছাড়া, সেই সভায় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও উপস্থিত ছিলেন। এই তিনজনকে তিনি বার্ষিক ভোজসভায় নিয়ে এসেছিলেন। এটা এমাজ ভাইয়ের পক্ষেই সম্ভব ছিল। কারণ, তিনি সমঝোতার রাজনীতি করতেন, সংঘাতের রাজনীতি না। সবাইকে একসঙ্গে কীভাবে আনা যায়, সে জন্য তিনি সারা জীবন সাধনা করেছেন, এটি তার একটি বড় উদাহরণ।’

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অপরিহার্যতা নিয়ে এমাজউদ্দীন আহমদের লেখালেখি প্রসঙ্গে ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অপরিহার্যতা তিনি বলেছেন এবং লিখেছেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপাদান হলো গণতন্ত্র। আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ি, তাহলে দেখতে পাব, অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রীতি শুরু হয়। বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং আমরা যদি বাংলাদেশের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার নীতির দিকে দেখি, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভ হলো গণতন্ত্র। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যে আত্মপ্রকাশ—সেটা হয়েছে গণতন্ত্রের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি।’

ড. আকবর আলি খান আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। গণতন্ত্র ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সবশেষে, যদি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়, তবে সমাজতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনিসংকেত।’

ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘যে দেশে জনগণ সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, সেটিই হলো গণতন্ত্র। যে দেশে জনগণের নিয়ন্ত্রণ নাই, ভোট হোক আর যাই হোক, সেটিকে প্রকৃত নির্বাচন বলা চলে না। এই দিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের এখানে গণতন্ত্র গড়ার প্রয়োজন রয়েছে। গণতন্ত্র গড়ার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে এমাজউদ্দীন আহমদের কাছে। যিনি লিখেছেন, এ সম্বন্ধে বলেছেন এবং সেটা চর্চাও করেছেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত