Ajker Patrika

আড়াইহাজারের কয়েকটি গ্রামে ঘরে ঘরে জঙ্গি

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২১, ১২: ১৫
আড়াইহাজারের কয়েকটি গ্রামে ঘরে ঘরে জঙ্গি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দাবাজার থেকে নোয়াগাঁও। কাদামাটির রাস্তায় তিন কিলোমিটার এগোতেই পথ আটকে দেন গ্রামবাসী। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। গত মাসে দুটি বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ এক জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।

কিসের বিপদ? প্রশ্ন করতেই একজন বললেন, এ এলাকায় অনেক জঙ্গি আছে। তারা নব্য জেএমবি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এলাকার এক ইউপি সদস্য বলেন, জঙ্গিবাদ থেকে সরে আসার জন্য এলাকার তরুণদের নিয়ে অনেক সালিশ-বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বললেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবিতে জড়াতে আড়াইহাজারের কয়েকটি গ্রামের ২০-২৫ জন তরুণ ঘর ছেড়েছে। তবে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর সঠিক সংখ্যা ৪০-৫০-এ গিয়ে দাঁড়াতে পারে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান আসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিখোঁজ তরুণদের ৯ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিবাদে সক্রিয় আরও কিছু তরুণের নাম পাওয়া গেছে।

আড়াইহাজারের নোয়াগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী মিয়া সাহেবের বাড়ি। ১৫ বিঘা জমির ওপর ২০০ বছরের পুরোনো বাড়িটির উঠানেই তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, বড় বড় দুটি পুকুরঘাট ও পোস্ট অফিস রয়েছে। গত ১১ জুলাই মধ্যরাতে বাড়িটির মসজিদের মুয়াজ্জিন আবদুল্লাহ আল মামুনের কক্ষ থেকে তিনটি আইইডি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে সিটিটিসি। ১৬ মে নারায়ণগঞ্জে ট্রাফিক বক্সে বোমা হামলার ঘটনায় এই বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল।

মিয়া সাহেবের বাড়িতে থাকা তৃতীয় প্রজন্মের বড় ছেলে ফাইজুল বারী খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মুয়াজ্জিন আবদুল্লাহ আল মামুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মিষ্টভাষী মামুনের সঙ্গে এলাকার তরুণদের সুসম্পর্ক ছিল। তাঁরা নিয়মিত এখানে আসা-যাওয়া করতেন।

সাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নোয়াগাঁও গ্রামের সোলায়মান খান তরুণদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং জঙ্গিবাদের বিষয়ে কিছু না বলতে চাইলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাহমুদ একাধিক গ্রাম্য সালিশের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করেই এলাকার একদল তরুণের মধ্যে প্রকাশ্যে উগ্রবাদ লক্ষ করা যায়।

এলাকার লোকজন বলছেন, জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমান এ এলাকায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। মিয়া সাহেবের বাড়ির সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল।

মিয়া সাহেবের বাড়ির বড় ছেলে ফাইজুল বারী খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শায়খ আব্দুর রহমান সর্বশেষ এসেছিলেন ২০০৫ সালের জুলাই মাসের কোনো এক শুক্রবার। তখন আমার বাবা আব্দুল মোহাইমেন খান বেঁচে ছিলেন। আমরা তিন ভাইও বাড়িতে ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন এসেছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন স্থানীয় ছিলেন। কথার একপর্যায়ে শায়খ আব্দুর রহমান বলেন, আমি ইসলামি রাষ্ট্র করতে চাই। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর মিয়াবাড়িতে এই এলাকার কেন্দ্র হিসেবে বৈঠকখানা করব বলে পরিকল্পনা করেছি।’ ফাইজুল বারি বলেন, এরপর ইসলামের মাসালা নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আবদুর রহমানের তর্ক শুরু হয়। আমি তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাই। একপর্যায়ে তিনি আমাদের হুমকিও দেন। এ ঘটনার চার দিন পর আড়াইহাজারে ব্র্যাক ব্যাংকে ডাকাতি হয়।'

জানা যায়, আড়াইহাজারের ৬৫ গ্রামে ২ হাজারের বেশি জামে মসজিদ আছে, যার অধিকাংশ মসজিদের মুয়াজ্জিন এলাকার বাইরের লোক। তাঁরা এখন প্রকাশ্য নব্য জেএমবির প্রচারণার কাজ করেন।

২০১৮ সালে নরসিংদীতে নব্য জেএমবির দুটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে নোয়াগাঁওয়ের পাশের গ্রাম পাঁচবাড়িয়ার হাফেজ নামের এক জঙ্গি। হাফেজরা আট ভাই। হাফেজের বাবা কারি নজরুল ইসলাম। বড় ভাই আকবর আলী, যিনি পলাতক। অভিযোগ আছে, তাঁরা সবাই এলাকায় প্রকাশ্যে উগ্রবাদের দাওয়াত দেন।

এলাকার মুসল্লিরা বলছেন, পাঁচবাড়িয়া গ্রামের ভুঁইয়াবাড়ি মসজিদের একজন মুয়াজ্জিনও আছেন এ তালিকায়। বাবরি চুলের এই মুয়াজ্জিনের নাম আবদুল্লাহ মুসাফির। এলাকায় কানাঘুষা আছে, গ্রেপ্তার জঙ্গি আবদুল্লাহ মামুনের সঙ্গে তাঁকে অনেকবার দেখা গেছে। তিনি জুমার দিন প্রকাশ্যে জিহাদ করার পক্ষে বক্তব্য দেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক নোয়াগাঁও পাঁচবাড়িয়া ও পাঁচরুখিতে অভিযানে গিয়ে দেখে গেছে, চিহ্নিত জঙ্গিদের পরিবার তাদের সমর্থন দিচ্ছে। অভিযুক্ত এক জঙ্গির মা তাঁর ছেলের মোবাইল ঘরের মধ্যে মাটিতে পুঁতে রেখেছেন। পরে তাঁর মাকে জেরা করলে তিনি জানান, সন্তান এই মোবাইল দিয়েই ইসলামের দাওয়াত দেয়। তাই তিনি মোবাইল হাতছাড়া করবেন না। কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তা এডিসি রহমত উল্লাহ বলেন, জঙ্গিদের অনেক পরিবার বিশ্বাস করে, জঙ্গিবাদের মাধ্যমে তাঁর ছেলের মৃত্যু হলে সে জান্নাতবাসী হবে।

এদিকে আড়াইহাজারে এত কিছু ঘটলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, `ওই এলাকার জঙ্গিদের নিয়ে ঢাকা মহানগরের সিটিটিসি কাজ করছে। আর আমি এক মাস ধরে যোগদান করেছি। তাই আগের ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানা নেই।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত