Ajker Patrika

ঈদে এবার দ্বিগুণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ১০
ঈদে এবার দ্বিগুণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি 

করোনার পরে এবারের ঈদে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এ ছাড়া এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এতে আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটতে আসন্ন ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সব পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তা ছাড়া রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলো বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, টঙ্গী রেলস্টেশনসহ অন্যান্য জায়গায় যাতায়াতে মানুষকে অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে। এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা এবং ছোট যানবাহন, বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাবে বলে সতর্ক করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হামিদুজ্জামান বলেন, ‘মহাসড়কে এবার যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ হবে তার যৌক্তিকতা আছে। করোনার সময় বন্ধ থাকার পরেও ঈদের মধ্যেও প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ বাড়ি ফিরেছে। আমার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এবার ঈদের আগের চার দিন প্রতিদিন ৩০ লক্ষ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। কিন্তু সড়ক-রেল ও নৌপথে যাত্রী পারাপারের সক্ষমতা আছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ। বাকি ১৬ লাখ মানুষ কি তাহলে বাড়ি যাবে না? অবশ্যই বাড়ি যাবে। ছোট যানবাহন, ট্রেনের ছাদে, ট্রাকে মোটরসাইকেলে বিভিন্নভাবে যাতায়াত করবে। এতে বোঝা যায়, সড়ক ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সড়কে যখন গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে, তখন কোনো ব্যবস্থাপনাই কাজে আসবে না। সে ক্ষেত্রে এবার ঈদের আগে যে আট দিন ছুটি আছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে সড়কের ব্যবস্থাপনা তৈরি করলে মানুষের সঠিকভাবে বাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হবে।’ 

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। তা ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহনের সংকট, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু কিছু পরিবহন মালিক-চালকেরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবারের সব পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হবে। নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি বিআইডাব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সারা দেশে ৪০০ নৌ ও ফেরিঘাটে নিয়োজিত ইজারাদারেরা ঈদে যাত্রী পারাপারে বাড়তি টোল আদায়ের নৈরাজ্য চালান। এবারও তাঁরা তৎপর হয়ে উঠেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে ঈদের সময় দুর্ঘটনা বাড়ে উল্লেখ করে বলা হয়, অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতিবছর সড়ক ও নৌপথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০/১২ ঘণ্টা বিরামহীন যানবাহন চালাতে বাধ্য করার কারণে এবং অদক্ষ চালক দিয়ে আনফিট যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ঈদে কয়েক শ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণমতে, ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে। এবারও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ থাকায় সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রেন ও বিমানের টিকিটের বিষয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পেতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়, যার ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনা রেলওয়ে এখনো করতে পারেনি। এতে টিকিট কালোবাজারির সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ঈদের আগে ও পরে ১০ দিনের বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দখল করে নেওয়ায় এবারের ঈদে যাত্রীসাধারণকে এসব ফ্লাইটে টিকিট কয়েক গুণ বাড়তি দামে কিনতে হবে।’

এদিকে, এবারের ঈদে কালবৈশাখীর আশঙ্কা থাকায় নৌপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আনফিট নৌযান বন্ধসহ ফিটনেসধারী নৌযানে যাতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে না পারে, তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি টার্মিনালে নানা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে সর্বস্ব খুইয়ে ঈদ আনন্দ মাটি হতে পারে। তাই প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে সিভিল পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোসহ মহাসড়কে ডাকাতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত