বাস ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে জখম, শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর 

যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image

যশোর পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের মনিহারস্থ এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। 

সমিতির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরের নড়াইল বাসস্ট্যান্ডে ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটিতে বাসের সুপারভাইজারের হাতে রক্তাক্ত জখম হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী। সেই ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। 

এ সময় সড়কে টায়ারে আগুন দেওয়া হয়। পরে কয়েকটি বাস ও সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কার্যালয়ের হিসাব বিভাগের ক্যাশ ভল্ট ভেঙে আড়াই লক্ষাধিক টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস লুটপাটও করেছেন বলে অভিযোগ। 

এ ঘটনায় গতকাল রাত থেকে আজ শনিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল মনিহার এলাকা। শ্রমিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

এদিকে, যবিপ্রবি ওই শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত জখমের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। 

শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আহনাফ তাহমিদ বাঁধন নামে যবিপ্রবির জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুক্রবার বিকেলে নড়াইল থেকে বাসে যশোরে আসছিলেন। নড়াইল থেকে বাসভাড়া ৬৫ টাকা হলেও সুপারভাইজার ৮৫ টাকা দাবি করেন। এই নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। বাসটি যশোর মণিহার এলাকায় স্ট্যান্ডে পৌঁছানোর পর বাসের সুপারভাইজার বোর্ডে ব্যবহৃত লোহার ক্লিপ দিয়ে গলায় পোঁচ দেয়। এতে তাঁর গলার চার-পাঁচ ইঞ্চির মতো কেটে যায়। 

ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছান। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাসযোগে মনিহার এলাকায় যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে তারা কয়েকটি বাসে ভাঙচুর করে। 

এরপর ঘটনাস্থলে যশোর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আকাশ নামের এক শ্রমিককে আটক করে। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল দুতলা বিশিষ্ট পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। 

অভিযুক্ত আটক শ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাড়া নিয়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্ক হয় আমাদের এক শ্রমিকদের। পরবর্তীতে নাকি ওই শ্রমিক শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত জখম করে। পরে শিক্ষার্থীরা স্ট্যান্ডে এসে কয়েকটি বাস ভাঙচুর, সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে হাজির করে পুলিশে দেয়। তারপরেও শিক্ষার্থীরা রাতে আমাদের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।’ 

তিনি বলেন, সমগ্র অফিসের কোনো কক্ষ নেই যে, ভাঙচুর করেনি। বিভিন্ন জিনিসপত্র ও ক্যাশ ভল্ট ভেঙে আড়াই লক্ষাধিক টাকা লুট করেছে। এই টাকা অসহায় শ্রমিকদের টাকা। তারা এমন হামলা চালিয়েছে যে, টয়লেটের কমোডও ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা সবকিছু দেখে গেছে। ঘটনার পর পরিবহন শ্রমিকরাও ক্ষুব্ধ। নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 
 
শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের ভেতর ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে, শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের পর ঘটনার জড়িতদের বিচার দাবি ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের নিচে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী এতে অংশগ্রহণ করেন। 

মানববন্ধনে যবিপ্রবির ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকব। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাকে আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে নামব।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের নিচে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বজলুর রশীদ টুলু জানান, আহত শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত। 

এই বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থানায় মামলা করলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে। 

তিনি বলেন, পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটের ঘটনাও ঘটেছে। কারা জড়িত, সেটা বলা যাচ্ছে না। অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত