Ajker Patrika

চলতি মৌসুমে আমের ফলন কম, দাম বেশি

মেহেরপুর প্রতিনিধি
চলতি মৌসুমে আমের ফলন কম, দাম বেশি

আম উৎপাদনের অন্যতম জেলা হিসেবে পরিচিত মেহেরপুর। এ জেলার আম সুস্বাদু হওয়ায় বেশ কদরও রয়েছে। বিশেষ করে হিমসাগর আমের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এখানকার উৎপাদিত হিমসাগর জাতের আম রপ্তানি হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে জেলায় এবার আমের ফলন ভালো হয়নি। সঙ্গে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই আমের দাম ভালো থাকলেও চাষিদের মুখে হাসি নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এবার ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৩৫ হাজার ২৫০ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছর জেলায় গুটি, বোম্বাই, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, বিশ্বনাথ, আম্রপালি, মল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। স্বাদ ও গন্ধ ভালো থাকায় এখানকার উৎপাদিত আম রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।

চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে গুটি, গোপালভোগ ও বোম্বাই জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে ২৮ তারিখ থেকে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আম নিতে এ জেলায় ভিড় জমিয়েছে। বাগান থেকেই আম সংগ্রহ করছেন তাঁরা। আমের গুণাগুণ ধরে রাখার জন্য একটু দেরিতেই আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ক্যামিকেলযুক্ত আম বাজারে সরবরাহ না করতে পারে।

সদর উপজেলার কোলা গ্রামের আমচাষি আহম্মেদ আলী বলেন, চলতি মৌসুমে এবার ২০ লাখ টাকা দিয়ে ৭টি বাগান কিনেছি। ভেবেছিলাম ভালো ফলন হবে। পরিচর্যারও কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে গত বছরের তুলনায় পরিবহন খরচ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে কয়েক গুন। সঙ্গে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে আমের ফলন হয়েছে কম। তবে চাহিদা রয়েছে বেশি। আমের দামও ভালো রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। 

বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য আমের প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।আমঝুপি গ্রামের আমচাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত বছরের লোকসানের ভার মাথায় নিয়ে এবার আমের উৎপাদন করেছিলাম। কিন্তু ফলন বিপর্যয়ের কারণে এবারও মাথায় হাত। আমের বাজার ভালো। গত বছর হিমসাগর আম বিক্রি করেছিলাম ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ। এবার বিক্রি করছি ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ। বোম্বাই আম বিক্রি করেছিলাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা মণ। এবার বোম্বাই আম বিক্রি করছি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ। তারপরও আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। কারণ গত বছরের তুলনায় এবার আমের অর্ধেক ফলনও হয়নি। 

শহরের চক্রপাড়ার আমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণত ঢাকাতে আমের চালান দিয়ে থাকি। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি ট্রাকে ভাড়া বেড়েছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে, মেহেরপুর থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ছিল ২১ থেকে ২৪ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে সেই ভাড়া চায় ২৪ থেকে ২৭ হাজার টাকা। প্রতি ক্ষেত্রে যে হারে খরচ বেড়েছে, আম বিক্রি করে সে হারে টাকা উঠছে না। অন্যদিকে, একটি বাগান ২ থেকে ৩ বছরের জন্য কিনতে হয়। ফলে বাগান মালিককে কেনার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দিতে হয়। তিন বছর এক জায়গায় এত টাকা পড়ে থাকার পর যে পরিমাণ লাভ হচ্ছে তা খুবই সীমিত। 

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) এ. কে. এম কামরুজ্জামান বলেন, আমরা সাধারণত ফসল উৎপাদন নিয়ে কাজ করি। চলতি মৌসুমে দুর্যোগ আবহাওয়ার কারণে চাষিদের আম উৎপাদনে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি চাষিদের পরামর্শ দিয়ে কীভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

পরিচালক আরও বলেন, দামের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এবার আমের ফলনও কম হয়েছে। তারপরও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত