Ajker Patrika

অনিয়মের অভিযোগ, যশোর পিটিআই সুপারিনটেনডেন্টের অপসারণ দাবিতে ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন 

যশোর প্রতিনিধি
অনিয়মের অভিযোগ, যশোর পিটিআই সুপারিনটেনডেন্টের অপসারণ দাবিতে ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন 

যশোর পিটিআইয়ের চলমান ব্যাচের ১৫০ প্রশিক্ষণার্থীর মাসিক ভাতা থেকে ২০০ টাকা করে কর্তনের অভিযোগ উঠেছে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক (ইউনিফর্ম) নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ওই সব দোকান থেকে বড় অঙ্কের টাকা কমিশন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের অপসারণ দাবিতে আজ সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে প্রশিক্ষণার্থীরা।

পিটিআই ক্যাম্পাসে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন শুরু করেন। তারা জানিয়েছেন, যত দিন এই সুপারিনটেনডেন্ট দায়িত্বপালন করবেন, তত দিন তারা আর ক্লাসে ফিরব না। 

আজ সোমবার সকালে পিটিআই ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীরা ক্লাস বর্জন করে শ্রেণিকক্ষের বাইরে অবস্থান করছেন। খবর পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশিক্ষণার্থীদের বক্তব্য শুনতে পিটিআই ক্যাম্পাসে যান। 

২০২৪ -২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থী আবু জাফর গিফারি বলেন, ‘সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের দায়িত্বপালন কালে আমরা কিছু শিখতে চাই না। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা তো মানুষ গড়ার কারিগর। আমরা এখানে এসেছি শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ নিতে। সেই কারিগররা দুর্নীতিবাজদের কাছে এসে কী শিখবে। এই সুপারিনটেনডেন্টের কাছে দুর্নীতি ছাড়া কিছুই শিখতে পারব না। তাই তার অপসারণ চাচ্ছি। তিনি বলেন, ক্লাস বর্জনের খবরে গতকালও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসেছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন আজ সোমবার সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আজও এসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাননি। ফলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’ 

প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য ১০ মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স চলমান রয়েছে। এই কোর্সের জন্য ছয় মাস আবাসিক ও চার মাস অনাবাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। ১৫০ জন করে প্রতি ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেন। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পোশাকের মধ্যে নারীদের শাড়ি ও পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট এবং সকালে প্যারেডের জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই জুতা-টি শার্ট-ট্রাউজার কিনতে হয়। এসব পোশাক কেনার জন্য সরকার জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিলেও পাঁচ হাজারের বেশি টাকা প্রশিক্ষণার্থীদের খরচ হয়। 

প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ওই পোশাকের দাম যাচাই করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দোকান থেকে কেনার সুযোগ নেই। পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ারের নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও দোকান থেকে এসব পোশাক কিনতে বাধ্য করেন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পিটিআই সুপার কমিশন নেন। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, যশোর কালেক্টরেট মার্কেটের বলাকা টেইলার্স থেকে পুরুষদের শার্ট প্যান্ট ও মেয়েদের শাড়ি নিতে বাধ্য করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পুরুষদের শার্ট ও প্যান্ট প্রতি ১০০ টাকা করে কমিশন নেন পিটিআই সুপার অতিয়ার। এ ছাড়া নারী ও পুরুষদের অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা করে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন তোলেন তিনি। 

যশোর পিটিআইকমিশনের টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী এনামুল কবির  বলেন, ‘মিষ্টি খাওয়ার জন্য পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট প্রতি পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়’। পাঁচ বছর ধরে তিনি পিটিআই প্রশিক্ষণার্থীদের পোশাক তৈরি করে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান যশোর পিটিআইতে চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। 

প্রশিক্ষণার্থীরা মাসিক তিন হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা পান। চলতি মাসের টাকা পরের মাসে দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিস ম্যানেজ করার কথা বলে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার ক্যাম্পাসে উপস্থিত সাংবাদিকদের কিছু বলেননি। তবে পরে সাংবাদিকদের বলেন,  ‘চ্যানেলে ঘুষের টাকা না দিলে এজি অফিস (জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স) থেকে কোনো বিল পাশ করে না। ২০০ টাকা করে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে এজি অফিসে ঘুষ দিতে হয়েছে’। 

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ঠিক না। বিল আনলে পাশ করে দিই’।

এদিকে আবাসিক হলে থাকার জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে সংস্থাপন চার্জ নেওয়া হয়। আবাসিক হলে না থাকলেও এই চার্জ বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়। ব্যাচ প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে ওঠে। দুইটি আবাসিক  হলের আয়ার বেতন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এই টাকা তোলা হয়। অথচ এই টাকা গ্রহণের কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, ‘সংস্থাপন চার্জ নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। রসিদ ছাড়াই প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে এই চার্জ নেওয়া হয়। এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। আবাসিক হলের স্থায়ী অবকাঠামো উন্নয়নেও এই টাকা খরচ করা হচ্ছে’। 

যশোর পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মানববন্ধনএ বিষয়ে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সংস্থাপন চার্জের টাকা প্রশিক্ষণার্থীরা উত্তোলন করে। আবার তাদের মাধ্যমেই খরচ হয়। হোস্টেল সুপারেরা বিষয়টি দেখেন। এখানে আমার কোনো ইনভলমেন্ট নেই’।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টা দেখছেন’। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি পিটিআই ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগগুলো শুনেছি। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। পেলে শিক্ষাসচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিবো’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

  • উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে
  • প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে; গভীর নলকূপে পানি মিলছে না
দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে। তারা জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের আলগীসহ কয়েকটি গ্রাম, লেবুখালী ইউনিয়নের লেবুখালীসহ উত্তর এলাকা, আংগারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম আংগারিয়াসহ পশ্চিম এলাকা, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের দুমকী, শ্রীরামপুর, উত্তর দুমকী এলাকায় দুই বছর ধরে শুকনো মৌসুমে হস্তচালিত গভীর নলকূপে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এসব এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানায়, এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ জানালে কর্তৃপক্ষের লোকজন গিয়ে দেখে জানিয়েছেন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে গভীর নলকূপে পানি উঠছে না।

এ বিষয়ে কথা হয় শাহজাহান খান নামের এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুকনো মৌসুমে এলাকার খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পীরতলা জামলা ও আংগারিয়া খালটিতে ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানির প্রবাহ ব্যাহত ও খালের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় লোকজন পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলের পানির অভাবে অনেকে ব্যবহার অনুপযোগী পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জামাল হোসেন নামের এক শিক্ষক বলেন, শুকনো মৌসুম এলেই কলেজশিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা পানির সমস্যায় ভোগেন। এ সময় উপায় না পেয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয়।

পশ্চিম আংগারিয়ার বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, গভীর নলকূপ বসিয়েও পানির সংকটে ভুগতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুম শুরু হলেই পানি পাওয়া যায় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব এলাকায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ফুট গভীরে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

দুমকী উপজেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ৫৩০টি টিউবওয়েল এবং বেসরকারিভাবে ১ হাজার টিউবওয়েল বসানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া এলাকাবাসী ব্যক্তিগত খরচে নিজ নিজ বাসায় টিউবওয়েল বসিয়ে মোটর যুক্ত করেও পানি তুলতে পারছে না।

পানিসংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নিপা আক্তার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে হস্তচালিত নলকূপের পরিবর্তে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য এলাকাবাসীর স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

  • স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ বাজেটের ০.০৮৪ শতাংশ
  • ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক মাত্র দুজন
  • প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ জন চিকিৎসা নেন
সোহানুর রহমান, জবি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা; যা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় মাত্র সাত একর জায়গায় জবি ক্যাম্পাস। আটটি ভবনে চলছে ৩৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই দশক পরও নানা সংকটে রয়েছে জবি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৮৪ শতাংশ। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ ১২৫ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসাসেবার বাজেট বাড়ানোর জন্য আমরা ইউজিসির সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বৃদ্ধি করছে না। তাই একটি বিশেষ ফান্ডের আবেদন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী বছরে এর ব্যবস্থা হবে।

অব্যবস্থাপনায় মেডিকেল সেন্টার

জবির বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও লোকবল নেই। প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিলেও সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন চিকিৎসক, তিনজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন নার্স, দুজন অফিস সহকারী ও একজন ক্লিনার। রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় মেডিকেল সেন্টার থেকে দেওয়া হয় শুধু প্যারাসিটামল। অনেক সময় প্যারাসিটামলও পাওয়া যায় না।

গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীর কথা শুনতে চান না। শুধু নাপা, প্যারাসিটামল বা স্যালাইন দিয়েই দায়িত্ব সারেন।

দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. রাতিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার সমস্যা অনুযায়ী সঠিক ওষুধ দেওয়া হয়নি। শুধু প্যারাসিটামল ও স্যালাইনই মেলে মেডিকেল সেন্টারে।’

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. কামরুল হাসান বলেন, রক্তস্বল্পতার ইনজেকশন দেওয়ার সময় নার্সের অদক্ষতার কারণে তা মাংসে প্রবেশ করে। ফলে ক্ষত তৈরি হয়, যা পাঁচ মাসেও সারেনি।

এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘আমরা অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ৪০ ধরনের ওষুধ রয়েছে, যা রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসে, তাই সাধারণত প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।’

ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ‘চিকিৎসা বাজেট এত কম কেন, এটি আমাদেরও প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলছে। তবে বর্তমান প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছুটা বৃদ্ধি এরই মধ্যে হয়েছে। ইউজিসির অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সবই দিতে পারছে না। তবুও আশা করছি, শিগগির এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দুটি পদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বাজেট অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা রাখছি আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভালো বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর: গ্রাম আদালতে অতিরিক্ত ফি

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গ্রাম আদালতে সরকারি নামমাত্র ফি আদায়ের নিয়ম থাকলেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাবি, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচার চাইতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাঁদের। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদটির হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন নান্টু আলী নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগের সপক্ষে ভিডিও প্রমাণও দাখিল করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাম আদালতে দেওয়ানি মামলার ফি ২০ টাকা এবং ফৌজদারি মামলার ফি ১০ টাকা। অথচ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাবি, এখানে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে হাজিরা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, স্বল্প সময়ে ও কম খরচে বিচার পাওয়ার আশায় তাঁরা গ্রাম আদালতে আসেন। কিন্তু এখানে এসেও তাঁদের অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।

আল্লাহর দরগা বাজার এলাকার এক ঝালমুড়ি ও ফুচকা বিক্রেতা জানান, পারিবারিক কলহ-সংক্রান্ত মামলায় তাঁর কাছ থেকে ধাপে ধাপে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। মুন্না নামের অন্য এক ভুক্তভোগী জানান, একটি সাধারণ অভিযোগ দায়ের করতে তাঁকে ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে হিসাবরক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, যোগদানের পর থেকে তিনি এমনভাবে টাকা নিয়ে আসছেন।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান উভয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে অবগত নন বলে দাবি করেছেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য গুহ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে এবং সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত