অশনির বৃষ্টিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ মে ২০২২, ০০: ৫৩
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ০০: ৫৭

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপে যশোরের মনিরামপুরে সোমবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। দিনভর ঝরা বৃষ্টির পানিতে ভাসছে মাঠে কেটে রাখা কৃষকের সোনালি স্বপ্ন বোরো ধান। 

ধার দেনা করে চাষ করা ধান ঘরে তুলে বছরের খোরাকি আর ঋণ শোধের যে স্বপ্ন এত দিন কৃষকেরা দেখছিলেন অশনির বৃষ্টিতে তা ফিকে হয়ে গেছে। ভিজে যাওয়া ধান শুকিয়ে কবে ঘরে তুলতে পারবেন নাকি জমিকে ভিজে ধানে চারা গজিয়ে যাবে তা নিয়ে এখন চিন্তিত কৃষক। 

সোমবার সরেজমিনে উপজেলার মোবারকপুর, হানুয়ার, কোমলপুর, ষোলখাদা, রোহিতা, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মাঝিয়ালী, গরিবপুর, কাশিপুর, গালদা, খড়িঞ্চি, ইত্যা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ পাকা ধান কেটে ও আঁটি বেঁধে ফেলে রেখেছেন চাষিরা। অনেকে আবার গাড়ি ভরে বাড়ি নেওয়ার জন্য খেতে ধান গাদা দিয়ে রেখেছেন। সোমবারের বৃষ্টিতে সব ধান ভিজে গেছে। খেতে জমা পানিতে এখন ভাসছে সব ধান। 

এদিকে সোমবারের দিনভর টানা বৃষ্টিতে থেমে গেছে সাধারণ কর্মজীবন। বৃষ্টিতে বাইরে বের হতে না পেরে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। যারা সকালে নানা কাজে বাইরে বেরিয়েছেন বৃষ্টিতে ভিজে তাঁদের ঘরে ফিরতে হয়েছে। 

কৃষকেরা বলছেন, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩৩ শতকের বিঘাতে ২৫-৩০ মণ করে ফলন পাচ্ছে কৃষক। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ধান গোলায় তুলতে পারলে কৃষক বেশ লাভবান হতেন। 

মামুদকাটি গ্রামের চাষি মাইনুদ্দিন বলেন, ‘মাঠে সাড়ে তিন বিঘা জমির ধান কাটা রয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা দেখে তাড়াতাড়ি মাঠে যেয়ে কিছু ধান বাঁধতে পেরেছি। এখন সব ধান পানির নিচে।’ 

একই গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দেড়বিঘা জমিতে ধান পেকে আছে। সকালে যেয়ে কাটা শুরু করার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হয়েছে।’ 

মাহমুদকাটি গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বিচালি নষ্ট হয়ে গো খাদ্যের চরম অভাব দেখা দেবে। বিচালির দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।’ 

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে মনিরামপুরে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। উপজেলার কুলটিয়া, নেহালপুর, হরিদাসকাটি, মনোহরপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে অন্তত ৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষক ধান চাষ করতে পারেননি। ফলে ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৭৫ শতাংশ ধান কাটা পড়েছে। তবে চাষিরা বলছেন উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে এখনো সব ধানের মধ্যে মাত্র ৪ আনা ধান কাটা পড়েছে। ১২ আনা ধান খেতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর দু চার দিন সময় পেলে ধান বাড়ি চলে আসত। এখন শুনছি ৩-৪ দিন টানা বৃষ্টি হবে। তখন এ ধানের কি উপায় হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘এরই মধ্যে ৭৫ শতাংশ ধান কৃষক বাড়ি তুলতে পেরেছেন। বাকি ধান মাঠে কাটা রয়েছে। সোমবারের বৃষ্টিতে সে সব ধান ভিজে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত