চুরি করতে গিয়ে গৃহবধূর চোখে-মুখে সুপারগ্লু লাগান এনামুল: পুলিশ

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৪৫

খুলনায় চোখ-মুখে সুপারগ্লু ও মুখে টেপ দিয়ে মধ্যবয়সী সেই গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনাটিকে নিছক চুরি বলে দাবি করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে খুলনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। 

এ ঘটনায় পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামের ইমামুল জোয়াদ্দার ওরফে এনামুল, তাঁর মা রাশিদা বেগম, ক্রেতা স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুমন হালদার ও সহযোগী আব্দুস সামাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় এনামুলের জিন্স প্যান্ট থেকে লোড অবস্থায় এক রাউন্ড তাজাগুলিসহ একটি অন সুটার গান, ১০০ পিস ইয়াবা, চেতনানাশক ট্যাবলেট ও সিগারেট উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, ইমামুল জোয়াদ্দার ওরফে এনামুল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, সে রাতের বেলায় দু-তিনদিন রাড়ুলী গ্রামের ষষ্টিতলা বাজার সংলগ্ন মাঠের পাশে ভিকটিম জাহানারা বেগমের বাড়ির দক্ষিণ পাশে মেহগুনি বাগানে নেশা করতে গিয়েছিল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে ওই বাড়ির কাছে গিয়ে দেখে ওই মহিলা একা জাল বুনছে। 

তখন এনামুল পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাগরিবের নামাজের পর ঘরের সানসেট ধরে ছাদের ওপরে উঠে সিঁড়িঘর দিয়ে নিচে নেমে সিঁড়ির নিচে ভাত দেখতে পায়। এরপর সে ভাতের ভেতর চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে আসে। রাত ২টার দিকে ছাদ দিয়ে আবার তাঁর ঘরে প্রবেশ করে এনামুল। এ সময় ওই নারীর জ্ঞান ফিরে এলে সে তাঁর মুখ চেপে ধরে চোখে-মুখে সুপারগ্লু লাগিয়ে দেয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হলে এনামুল শাবল দিয়ে তাঁর ঘাড়ে আঘাত করে। 

এতে প্রচুর রক্তক্ষণ হলে গৃহবধূ অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর এনামুল তাঁর হাত-মুখ বেঁধে বিবস্ত্র করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এরপর গৃহবধূর জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি হাতের বাঁধন খুলে ফেলেন। তখন এনামুল রাগান্বিত হয়ে তাঁর বুকে কামড় দেয়। এরপর এনামুল ওড়নার একপাশ দিয়ে পেছন থেকে হাত ও অন্যপাশ দিয়ে তাঁর পা বাধে। আরেকটি ওড়না দিয়ে তাঁর মুখে বাধে। এরপর এনামুল তার দুই কান থেকে দুটি কানের দুল ছিড়ে নেয়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। 

এ সময় গৃহবধূর গোঙানিতে পাশের বাড়ির একজন নারী ‘চোর চোর’ বলে ঘরের বেড়ার টিনে আঘাত করলে এনামুল দ্রুত একটি মোবাইল ফোন ও কানের দুল দুটি নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে মেহেগুনি গাছ বেয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন এনামুল পাশের ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারে গিয়ে ৪ হাজার টাকায় কানের দুল বিক্রি করে। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এনামুল রাত ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে গদাইপুর গ্রামের কেসমত সরদারের বাড়ি প্রবেশ করে একটি সিম্ফনি মোবাইল ফোন ও একটি কানের দুল চুরি করে। চুরি করা মোবাইল ফোনটি সে তাঁর মাকে দেয় ও কানের দুলটি চুকনগর বাজারের মা জুয়েলার্সে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ওই দোকানের মালিক সুমন হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার আরও বলেন, আদালতের মাধ্যমে আসামি এনামুলকে রিমান্ডে এনে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামের একটি বাড়িতে চুরি করতে এসে চোখ-মুখে সুপারগ্লু দিয়ে এক গৃহবধূকে (৪৫) ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে চোরের বিরুদ্ধে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত