Ajker Patrika

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ

বড় মেয়েকে আর ওই সংসারে পাঠাবেন না, জানালেন মা

মাগুরা প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আট বছরের শিশুটির মা জানিয়েছেন, তাঁর বড় মেয়েকে আর ওই বাড়িতে সংসার করতে পাঠানোর ইচ্ছা নেই পরিবারের। কম বয়সে মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল তাঁদের দারিদ্র্য। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর অভাব চরম পর্যায়ে উঠলে মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া হয়।

শ্রীপুর উপজেলার আট বছরের শিশুটি সদরে বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে ৬ মার্চ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়। অচেতন অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল, এরপর ফরিদপুর হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ দুপুরে সে মারা যায়। ধর্ষণের ঘটনায় ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বড় বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। চারজনই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

শিশুটির মা গতকাল রোববার জানান, তাঁর বড় মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। বিয়ের আগে তার চাচারা পাত্রপক্ষের খোঁজ নিয়েছিলেন। সবাই বলেছিলেন পরিবারটি ভালো। কিন্তু চার মাস আগে বিয়ে হওয়ার পর থেকে মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে ভালো ছিল না। মা হিসেবে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারছিলেন।

এই নারী বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েরে যারা নির্যাতন করে হত্যা করিছে, তাদের ফাঁসি তো চাই-ই, সেই সঙ্গে বড় মেয়েকে এসএসসি পর্যন্ত পড়া শেষ করতে চাই। ওর তো আর শ্বশুরবাড়ি নেই। ওর স্বামী নির্দোষ প্রমাণিত হলিও আমরা আর ওরে সংসার করতি দেব না। ওর ছোট চাচারে কইছি তালাক দেওয়ার জন্য উকিলের সাথে কথা বলতি।’

নিহত শিশুটির মা আরও বলেন, ‘ওর বাপ অসুস্থ হয়ে পড়ে ৯ মাস আগে। তখন থেকে কোনো আয় নেই আমাগের। মানষির বাড়ি ভিক্ষা তো করতি পারিনে। তখন বড় মেয়ে সিয়ানা হয়ে গেছে। ভাবলাম অভাবের সংসারে এ রকম সিয়ানা মেয়ে রাখলে বিপদ হতে পারি। তাই বিয়ে দিছি অল্প বয়সে। আমার যদি একটু অবস্থা ভালো হতো, তাহলে মেয়েডারে এসএসসি পাস করাতাম। বিশ্বাস করেন, অভাবের তাড়নায় একটা মেয়েরে হারালাম। শুধু ভাতের অভাবের কারণে।’

এক মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আরেক মেয়েকে হারানো এই মা জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাঁদের খোঁজখবর নিচ্ছে। টাকা-পয়সাও দিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জামা-কাপড়, খাদ্যসামগ্রীসহ ঈদের উপহার পেয়েছেন। জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সহায়তা পাঠিয়েছেন। তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর মন কেঁদে ওঠে হারানো মেয়ের জন্য।

এদিকে মেয়ে মারা যাওয়ার শোক নিয়ে এই নারী তাঁর অসুস্থ স্বামী-সন্তানসহ নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু করেছেন। অনেকে তাঁদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সে জন্য বাড়ির উত্তর পাশে মাটি ফেলে ভিটা তৈরি করছেন। তিনি জানান, বাড়ির ৭ শতাংশ জায়গা ছাড়া তাঁদের আর কোনো জমি নেই। এই অল্প জমিতে তিনটি কোনো রকমের ভাঙাচোরা টিনের ঘর। সামনে ঝড়বৃষ্টির সময়। বাকি তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাঙা ঘরে কীভাবে থাকবেন, তাই ঘর করতে সহযোগিতার টাকা দিয়ে বাড়ির পাশে গর্ত ভরাট করে ভিটা বানাচ্ছেন।

নিহত শিশুটির বড় দুই বোন ও ছোট এক ভাই রয়েছে। তাদের বাবা ঢাকায় মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান শিশুটির মা। তিনি বলেন, ‘ওর বাবা ছাড়া আমাদের ইনকাম কে করবে? ৯ মাস আগে এক দুর্ঘটনায় ওর বাবার মাথা আউলায় গেল। এরপর চিকিৎসা করিতে ডাক্তার কইছিল ৫ হাজার টাকা লাগবি। আমাগের নুন আনতি পান্তা ফুরায়। টাকা কনে পাব। সেই থেকে উনার মাথায় সমস্যা। এখন চিকিৎসা করাচ্ছে বিএনপির নয়ন ভাই। সুস্থ হলি ভাবছি একটা ছোট দোকান দিয়ে সংসার চালাব।’

শিশুটির চাচা বলেন, ‘আমার বড় ভাই খুব সরল-সোজা। সে মাটি কাটত, ভ্যান চালাত। এতে যা পেত, তা দিয়ে সংসার চালাত। কিন্তু ৯ মাস ধরে অসুস্থ, তাই পরিবারের সবাই কচুঘুটাও খেয়েছে। আমি দরিদ্র কৃষক, তবু যা পারি সাহায্য করি। এখন আমার একটা ভাস্তি এ রকম মারা গেল। তাতে খুব কষ্ট আছে আমাদের। কিন্তু জীবন তো আর থেমে নেই। ভাবিরা একটা ঘর চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে কারণে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না ভারত

মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢাকা: এনসিপি নেতা-কর্মীদের গলা ধাক্কা

সারা জীবন ‘একজনের কাছে কৃতজ্ঞ’ থাকবেন তামিম, কে তিনি

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টায় মিয়ানমার: রয়টার্স

সচিবালয়ে কর্মরতদের রেশন দেবে সরকার, ক্ষুব্ধ বাইরে কর্মরতরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত